স্বপ্না মুন্ডা। নিজস্ব চিত্র
পড়াশোনায় যাতে মেয়ের সমস্যা না হয়, সে জন্য বেসকারি ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী সংস্থা থেকে বছরে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিতেন মা কান্তি মুন্ডা। খড়িবাড়ি ফুলবাড়ি চা বাগানের শ্রমিক। স্বপ্ন, মেয়ে ডাক্তার হবে। তাঁর সেই স্বপ্নটা এ বার বাস্তব হতে চলেছে। প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই চালিয়ে নিট পাশ করে এ বছর ডাক্তারিতে পড়ার সুযোগ করে নিয়েছেন শিলিগুড়ির প্রত্যন্ত খড়িবাড়ি এলাকার ওই আদিবাসী ছাত্রী স্বপ্না মুন্ডা।
খড়িবাড়ির বাতাসি এলাকায় ফুলবাড়ি চা বাগানের বাসিন্দা স্বপ্না। বাবা রতনলাল মুন্ডাও ওই চা বাগানের শ্রমিক। বাগানের খাল লাইনে তাঁরা থাকেন। চা বাগানে কাজ করে মেয়ের পড়াশোনা চালাতে সমস্যায় পড়তে হত কান্তিদেবীদের। কিন্তু স্কুলে পড়াশোনায় বরাবরই ভাল ফল করত মেয়ে। বাতাসি শাস্ত্রীজি হাইস্কুলে বরাবর প্রথম হত স্বপ্না। সেটাই মাকে উৎসাহ দিত মেয়ের পড়াশোনা চালিয়ে নিয়ে যেতে। মাধ্যমিকে ৮০ শতাংশ নম্বর নিয়ে পাশ করে স্বপ্না। তার পর ভর্তি হয় শিলিগুড়ি শহরে মার্গারেট স্কুলে। এক বছর পেয়িং গেস্ট হিসেবে এবং এক বছর হস্টেলে থেকে পড়াশোনা চালাতে হয়েছে। মায়ের ঋণের টাকাতেই চলত সব কিছু। কান্তিদেবী বলেন, ‘‘বছরে ৫০ হাজার টাকা করে ঋণ নিতাম। পড়াশোনা তো চালাতে হবে।’’ ২০১৮ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে ৬০ শতাংশ নম্বর পেয়ে ভেঙে পড়ে স্বপ্না। কিন্তু হার মানেনি সে। শুরু করে নিটের প্রস্তুতি। দু’দফায় পরীক্ষা দিয়েও ফল মেলেনি। বুঝতে চেষ্টা করে কোথায় খামতি হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত এ বছর সফল হয়েছে ওই ছাত্রী। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে তফসিলি জনজাতি সংরক্ষিত আসনে সুযোগ পেয়েছে।
স্বপ্নাকে সংবর্ধনা জানান খড়িবাড়ির বিডিও সঞ্জয় পণ্ডিত এবং খড়িবাড়ি থানার পুলিশ। বিডিও বলেন, ‘‘স্বপ্নার মা যে ভাবে ঋণ নিয়ে মেয়েকে পড়াশোনা করিয়েছেন, তা ভাবলে অবাক হতে হয়। স্বপ্নার পাশে আমরা আছি। এসটি দফতর থেকে সহজে ঋণেরও ব্যবস্থা করা হবে। ও পড়াশোনা শেষ করে তার পর ঋণ শোধ করতে পারবে। খড়িবাড়ির কয়েকটি ব্যাঙ্কের তরফেও ওকে ‘এডুকেশন লোন’ দিতে আগ্রহী।’’ স্বপ্নার কথায়, ‘‘মায়ের জন্যই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পেরেছি। চিকিৎসক হয়ে মায়ের পাশে দাঁড়াতে চাই। মানুষের জন্য কিছু করতে চাই।’’