বর্তমান রাজ্য সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চেষ্টায় পাহাড়ে শান্তি ফিরেছে। ফাইল ছবি।
দার্জিলিং থেকে বিজেপি পর পর সাংসদ পেলেও, তাঁদের কেউই উল্লেখযোগ্য কোনও উন্নয়নের কাজ করেননি অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিয়েছেন রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ শান্তা ছেত্রী। তিনি তৃণমূলের দার্জিলিং পাহাড়ের সভানেত্রীও। সম্প্রতি সাংসদ ওই চিঠি পাঠিয়ে একাধিক প্রকল্পের উল্লেখ করে দার্জিলিঙের জন্য আর্থিক প্যাকেজের দাবি করেছেন৷ সাংসদের দাবি, ধাপে ধাপে উন্নয়নের কাজ হলে, পাহাড় থেকে ভিন্ রাজ্যে শ্রমিক হিসাবে কাজ করতে যাওয়ার প্রবণতা কমবে। দার্জিলিং পাহাড় অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হবে। পাহাড়ের নেতারা অবশ্য মনে করছেন, পঞ্চায়েত ভোটের আগে, কেন্দ্রের শাসক দলকে চাপে রাখতেই সাংসদ এই চিঠি দিয়েছেন। যত ভোট আসবে, ততই দু’পক্ষের মধ্যে টানাপড়েন বাড়তে থাকবে। সাংসদ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মতো দার্জিলিং অঞ্চলের জন্য ৭৫ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজের দাবি করেছেন।
দিল্লি থেকে শান্তা মঙ্গলবার বলেছেন, ‘‘পাহাড় পর পর আন্দোলনের জেরে অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়েছে। বর্তমান রাজ্য সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চেষ্টায় পাহাড়ে শান্তি ফিরেছে। এখন প্রয়োজন পরিকল্পনামাফিক উন্নয়ন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দল পাহাড় থেকে সাংসদ জিতে চলেছে। অথচ, ওঁদের কেউ কাজের কাজ একটাও করেননি।’’ তিনি জানান, নতুন আর্থিক বছরের শুরুতেই তাই প্রধানমন্ত্রীকে দুই পাতার চিঠি দিয়ে দার্জিলিঙের দাবি-দাওয়া জানানো হয়েছে।
তৃণমূলের পাহাড়ের নেতারা জানাচ্ছেন, গত কয়েক বছরে প্রধানমন্ত্রী একাধিক বার দার্জিলিং জেলায় সভা করেছেন। পাহাড় সমতলে বারবার এসেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও। ‘গোর্খাদের স্বপ্ন তাঁর স্বপ্ন’— এ কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তেমনই, অমিত শাহ কালিম্পং, কার্শিয়াঙের সভা থেকে নানা আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু পাহাড়ের আবেগ নিয়ে স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধান, ১১ জনজাতি গোষ্ঠীর স্বীকৃতি মেলেনি। রাস্তা, স্বাস্থ্য, পরিবহণ পরিষেবা খাতে জেলায় অবশ্য বরাদ্দ হয়েছে। তবে পাহাড়ি এলাকায় তুলনায় তা একেবারে কম। তাই সাংসদ শান্তা ছেত্রী প্রধানমন্ত্রীর কাছে ১৫টি দাবির কথা উল্লেখ করেছেন।
এর মধ্যে এমস-এর ধাঁচে হাসপাতাল, আইআইটি, টয় ট্রেনের আধুনিকীকরণ, চা বাগানে প্যাকেজ, ক্যানসার গবেষণা কেন্দ্র, পর্যটনের বিকাশ, স্পোর্টস বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো দাবি ছাড়াও, রাস্তাঘাট, রোপওয়ে, হাইস্পিড ইন্টারনেটের মতো একাধিক পরিকাঠামো তৈরির দাবি জানানো হয়েছে। সাংসদ জানান, গত প্রায় ১৫ বছর ধরে যশোবন্ত সিংহ, সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া, রাজু বিস্তারা পাহাড়ের সমর্থনে সাংসদ হয়ে চলেছেন। কিন্তু তাঁরা আজ অবধি কোনও বড় প্রকল্পের অনুমোদন পাহাড়ের জন্য করেছেন, তা দেখান। শুধু মানুষের আবেগ নিয়ে বিজেপি পাহাড়ে খেলে ভোটে জিতেছে। পাহাড়ের মানুষ তা বুঝতে পারছে, সেটা পুরভোট, জিটিএ ভোটে বোঝা গিয়েছে।
তৃণমূল সাংসদের জবাবে বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা বলেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বেই আমাদের অঞ্চলের উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। পরিবহণ, স্বাস্থ্য প্রতিটি ক্ষেত্রে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ হচ্ছে। আগামী দিনে প্রতিটি ক্ষেত্রে কাজ সামনে আসবে। আর দাবি যে কেউ করতেই পারেন। এ নিয়ে কিছু বলার নেই।’’