নবসাজে: মংপুর আইটিআই কলেজ ভবন। নিজস্ব চিত্র।
দার্জিলিং, কালিম্পং বা কার্শিয়াং শহরে নয়, রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি-বিজড়িত মংপুতে চালু হতে চলেছে দার্জিলিং হিল বিশ্ববিদ্যালয়।
গত সপ্তাহে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য নিয়োগের পর মংপুতে প্রস্তাবিত আইটিআই কলেজ ভবনে হিল বিশ্ববিদ্যালয় চালুর সরকারি সিদ্ধান্ত পাহাড়ের প্রশাসনিক মহলে এসেছে। রবিবারই মংপুতে গিয়ে এক দফায় আইটিআই কলেজ ভবনটি পরিদর্শন করেন জিটিএ প্রশাসনিক বোর্ডের প্রধান তথা দার্জিলিঙের জেলাশাসক পুন্নমবলম। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত মাসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাহাড়
সফরে থাকাকালীনই বিষয়টিতে সবুজ সঙ্কেত দেন।
প্রশাসনের বক্তব্য, পাহাড়ের যে কোনও শহর এলাকাই এখন যথেষ্ট জনবসতিপূর্ণ। অপরিকল্পিত একের পর এক নির্মাণের জেরে ঘিঞ্জি পরিস্থিতি দার্জিলিং, কার্শিয়াং ও কালিম্পং— তিন শহরেই। কোনওটাই বিশ্ববিদ্যালয়ের খোলামেলা ক্যাম্পাস করার পক্ষে উপযুক্ত নয়। পরে ক্যাম্পাস বাড়ানোর সুযোগও কম থাকবে সে ক্ষেত্রে। তাই তুলনায় অনেক নির্জন এলাকা হিসেবে মংপু পাহাড়কেই বাছা হয়েছে। সেখানকার কয়েক হাজার একর বিস্তীর্ণ সিঙ্কোনা জমি পড়ে থাকায় সিদ্ধান্ত নেওয়াটা আরও সহজ হয়েছে সরকারের পক্ষে। কারণ, ভবিষ্যতে এখানে পাহাড়ের ঢালে প্রয়োজনমতো ক্যাম্পাস-ভবন বাড়ানোর সুযোগও থাকবে বলে মনে করছেন প্রশাসনিক কর্তারা। প্রশাসন সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, এর পাশাপাশি মংপুতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতির অনুষঙ্গটিও এই সিদ্ধান্তের পিছনে কাজ করেছে।
সম্প্রতি কার্শিয়াঙের প্রশাসনিক সভায় প্রাক্তন জিটিএ চেয়ারম্যান অনীত থাপা বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠন চালুর জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন। যা শুনে নতুন পরিকাঠামো তৈরির বদলে পুরনো কোনও ভবনে ক্লাস শুরুর জন্য মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেন। তখনই মংপু আইটিআই কলেজকে বাছাইয়ের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। গত দেড় বছরে করোনাকে ঘিরে এই কলেজে আইসোলেশন সেন্টারও এক দফায় তৈরি হয়েছিল।
পাহাড়ের মাথায় তৈরি মংপুর কলেজটিতে অন্তত ৪-৫টি বিষয় নিয়ে পঠনপাঠন শুরু করা যাবে বলে আধিকারিকেরা মনে করছেন। ইতিমধ্যে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুবীরেশ ভট্টাচার্যকেই হিল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তায় কথায়, ‘‘১৬ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজের সঙ্গে নবম শ্রেণি থেকে স্কুল খোলার কথা। সেই দিকে লক্ষ্য রেখেই হিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শুরু করা হয়েছে। এই বছরেই যাতে প্রশাসনিক কাজের সঙ্গে পঠনপাঠন শুরু করা যায় তা দেখা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী সেটাই চান।’’
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, দার্জিলিঙে বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি সেই পঞ্চাশের দশক থেকে। গত তিন দশকে একাধিকবার পাহাড়ে বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি নিয়ে কথা হয়। কেন্দ্রের কাছে একসময় পাহাড়ে ক্ষমতাসীন বিমল গুরুং কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির দাবি জানান। জিটিএ চুক্তিতে যার উল্লেখও রয়েছে। কিন্তু আজ অবধি তা নিয়ে কাজ এগোয়নি। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফেও কোনও ঘোষণা করা হয়নি। এর মাঝে ২০১৮ সালে মুখ্যমন্ত্রী পাহাড় সফর থেকে দার্জিলিং গ্রিনফিল্ড ইউনিভার্সিটি তৈরির ঘোষণা করেন। মংপুরই যোগীঘাট এলাকা বাছাই করা হয়েছিল।
কিন্তু গত তিন বছরে তার কাজ এগোয়নি। এক দফায় উপাচার্য নিয়োগের চেষ্টা হলেও রাজভবন থেকে প্রশ্ন তোলায় তা আর এগোয়নি। করোনার আগে সরকার গ্রিনফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বদল করে দার্জিলিং হিল বিশ্ববিদ্যালয় করে। প্রাক্তন জিটিএ চেয়ারম্যান অনীত থাপা বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী দেওয়ালির উপহার দিয়েছেন। এখন সরকারি স্তরে বন্দোবস্ত করে প্রশাসনিক কাজ, পঠনপাঠন চালু করা গেলে পাহাড়ের ছেলেমেয়েরা অত্যন্ত উপকৃত হবে।’’