Mamata Banerjee’s UK Visit

হঠাৎ রাস্তায়! ঝলমলে লন্ডনে শেষ দিন। ভোটার লিস্টে নাম আছে তো? অক্সফোর্ডেও সতর্ক করে এলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা

ফিরে আসার দিন রোদে ঝলমল লন্ডনে চনমনে মমতা। সফল ভাবেই শেষ হচ্ছে এই সফর। রাতের বিমানে রওনা দেবেন। তার আগে দুপুরে হাঁটতে বেরিয়েছিলেন শহরে।

Advertisement

অনিন্দ্য জানা • লন্ডন

শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৫ ২০:৩১
Share:
Diary of the UK visit of Mamata Banerjee: last day in London

অক্সফোর্ড স্ট্রিটে সপরিবার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। (ডান দিকে) শিল্পপতি সত্যম রায়চৌধুরী। —নিজস্ব চিত্র।

হাঁটতে হাঁটতে দেখা

Advertisement

গত রবিবার কনকনে, স্যাঁতসেঁতে আর বিরক্তিকর রকমের টিপটিপে বৃষ্টির মধ্যে লন্ডনে পৌঁছেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। পরদিন থেকে অবশ্য আবহাওয়া বদলে যায়। শুক্রবার, ফেরার দিন তো অসাধারণ রোদ-ঝলমলে আকাশ। বেলা ১২টা নাগাদ রাস্তায় হাঁটতে বেরিয়ে পড়েন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নানা জায়গায় হাঁটতে হাঁটতে লন্ডনের অক্সফোর্ড স্ট্রিট। সেখানেই হঠাৎ দেখা হয়ে গেল সপরিবার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে। স্ত্রী ডোনা এবং মেয়ে সানাকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছিলেন দাদা। দেখাই হয়ে যখন গেল, তখন একসঙ্গেই খানিক পথচলা এবং খাওয়াদাওয়ার পর্ব। ঘটনাচক্রে বৃহস্পতিবারও অক্সফোর্ডের রাস্তায় মমতা হাঁটার সময় তাঁর মুখোমুখি এসে দাঁড়ায় সৌরভের গাড়ি। নেমে হাঁটার সঙ্গী হন তিনি। পরে কেলগ কলেজের গোটা অনুষ্ঠানেও উপস্থিত ছিলেন সৌরভ।

আক্ষেপ যেন না থাকে

Advertisement

শুক্রবার রাতের উড়ানে লন্ডন ছেড়ে দেশের পথে রওনা দেবেন মমতা বন্দ‍্যোপাধ‍্যায়। তার আগে তাঁর আর কোনও সরকারি কর্মসূচি নেই। কিন্তু নিজস্ব এবং দৈনিক কর্মসূচি আছে। সেটা কী? হন্টন। আবার কী? শুক্রবার স্থানীয় সময় বেলা ১২টায় হোটেল থেকে হাঁটতে বেরোন মমতা। যেমন আগেও বেরিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার অক্সফোর্ড সফর থাকায় মমতার দৈনিক হাঁটা হয়নি। তা নিয়ে তাঁর একটু অনুযোগও যে হয়নি, তা নয়। অক্সফোর্ডেও অবশ্য তিনি যতটা পেরেছিলেন, হেঁটে নিয়েছিলেন। কিন্তু তা তাঁর দৈনিক পদক্ষেপের ধারেপাশে নয়। শুক্রবার সে আক্ষেপ মিটিয়েই লন্ডন ছাড়ছেন মমতা।

সেনাদের স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি মমতার। —নিজস্ব চিত্র।

বার্তা রটি গেল ক্রমে

বৃহস্পতিবার অক্সফোর্ডের ঘটনার পর তাঁর কাছে প্রশংসাসূচক বার্তা আসতে শুরু করেছে। আরজি কর ইত‍্যাদি প্রসঙ্গ তুলে ধরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ‍্যমন্ত্রীর বক্তৃতা কার্যত ভন্ডুল করতে চেয়েছিলেন কয়েক জন বিক্ষোভকারী। শান্ত থেকে সংযত হয়ে সেই বিক্ষোভের মোকাবিলা করেন মমতা। দর্শকদের প্রতিরোধের মুখে বিক্ষোভকারীরা ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে যেতে কার্যত বাধ‍্য হন। তার পর থেকেই মমতার সংযমের প্রশংসা করে বার্তা আসা শুরু হয়েছে। তার দু’-একটি নমুনা ঘনিষ্ঠমহলে পেশ করেছেন মমতা বন্দ‍্যোপাধ‍্যায়। বার্তা ১: রাম-বামের অ্যাজেন্ডাকে হাসিমুখে যে ভাবে আপনি বানচাল করলেন, ডিনারে অক্সফোর্ডের অধ্যাপক-ছাত্রীরা তার খুব প্রশংসা করছিলেন। বার্তা ২: রবীন্দ্রনাথের অক্সফোর্ড বক্তৃতার ঠিক ৯৫ বছর পর আপনি এলেন। ১৯৩০ সালের ১৯ মে-র মতো ২০২৫ সালের ২৭ মার্চও এক গর্বের দিন হয়ে থাকবে গুণী বাঙালির কর্মচাঞ্চল্যের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির সোনালি ইতিহাসে।

৫০০ মাইলের গান

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘থিম সং’ এখন কী? বলার জন্য কোনও বিশেষ পুরস্কার নেই। যে লাইন তিনি অক্সফোর্ডের বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ‍্যে বলেছেন, সেটাই— ‘ফাইভ হান্ড্রেড মাইলস।’ বৃহস্পতিবার অক্সফোর্ডের কর্মসূচি সেরে বেরিয়ে তাঁকে প্রচুর মোবাইল ক‍্যামেরার মুখোমুখি হতে হল বাসে ওঠার আগে। অনেকে এসে পায়ে হাত দিয়ে প্রণামও করলেন। মমতা তাঁদের মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদও করলেন। বাস ছাড়তেই বোঝা গেল, বিক্ষোভ সামাল দিতে পেরে মমতাও তৃপ্ত। বললেন, ‘এই গানটা আমার খুব ফেভারিট।’ তার পরে নিজেই গাইতে শুরু করলেন, ‘ইফ ইউ মিস্ দ‍্য ট্রেন অ‍্যাম অন, ইউ উইল নো দ‍্যাট আই অ‍্যাম গন..।’

পায়ে হাত দিয়ে মমতাকে প্রণাম করেছেন অনেকে। —নিজস্ব চিত্র।

ভোটটা দিতে যেও

কেউ পুরুলিয়ার বাসিন্দা, কেউ মুর্শিদাবাদের আবার কেউ কলকাতার শ‍্যামবাজারের। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কলেজে পড়েন বা গবেষণা করেন। কেলগ কলেজে এসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতা শুনতে। কর্মসূচি শেষের পরে সকলে ঘিরে ধরলেন বাংলার মুখ‍্যমন্ত্রীকে। স্বাভাবিক। এমনিতে নিরাপত্তার কারণে কাছাকাছি ঘেঁষতে পারেন না। বিদেশে সেই ঘেরাটোপ খানিক শিথিল। ফলে মমতার কাছাকাছি আসতে পারছেন। গ্রুপ ছবি তুলতে পারছেন। পরিচয় দিয়ে বলতে পারছেন পশ্চিমবঙ্গের কোথায় বাড়ি। শুনেটুনে মমতা সকলকেই একটা বাক‍্য বলছিলেন বাধ‍্যতামূলক ভাবে, ‘পরের বছর ভোটটা দিতে যেও কিন্তু। ভোটার লিস্টে নাম না-থাকলে নামটা তুলিয়ে নাও এখনই।’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement