West Bengal Panchayat Election 2023

পাহাড়ে কি ছাইচাপা আগুন?

২০১৭ সালের পর থেকে পাহাড়ের নতুন রাজনৈতিক সমীকরণে আগুন নিভলেও হাতবদল হয় ক্ষমতার। সুবাস ঘিসিংয়ের হাত থেকে বিমল গুরুংয়ের হাতে।

Advertisement

কৌশিক চৌধুরী

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০২৩ ০৭:২৬
Share:

পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে উত্তপ্ত দার্জিলিং। — ফাইল চিত্র।

বৃষ্টিভেজা দার্জিলিং ম্যালের কফি শপে বসে দিল্লি, দেহরাদুনের বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় ব্যস্ত ছিলেন কলকাতার এক যুবক। আড্ডার বিষয়বস্তু— গত কয়েক বছরে পাহাড় কি বদলেছে? আলোচনায় উঠে আসে— অশান্তি, হানাহানি, খুন, হুমকি, বন্‌‌ধের রাস্তা ছেড়ে পাহাড় নতুন পথে হাঁটছে। একই সঙ্গে এ কথাও উঠে আসে যে, আগুনের রাজনীতি পাহাড়ে এখন আর নেই। কলকাতার যুবকের মন্তব্য, ‘‘পাহাড় হাসছে বলা হয়। কিন্তু অশান্তি থামলেও, পরিকাঠামোর দিক থেকে পাহাড় এখনও হাসেনি।’’

Advertisement

দ্বিতীয় রাউন্ড কফি দেওয়ার ফাঁকে কফি শপের এক কর্মী স্বর নামিয়ে যুবকদের বললেন, ‘‘পাহাড় শান্ত ঠিকই। কিন্তু ছাইচাপা আগুন থেকে গিয়েছে। শাসকের চেহারা, কাজের ধরনের বদল হয়েছে। তবে সবটাই এখনওরাজা এবং অনুগামীতে ঘেরা।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘নিয়ন্ত্রণের রাজনীতি পাহাড়ে বাড়ছে। পঞ্চায়েত ভোটে নানা অভিযোগ পাইনের জঙ্গলে ভেসে বেড়াচ্ছে।’’ দার্জিলিং লাগোয়া বিজনবাড়ির বাসিন্দা ওই যুবক নিমেষে চলে গেলেন কাজের ক্ষেত্রে। মিনিট-দুয়েক কফি টেবিলে বসা বন্ধুরা পরস্পরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলেন। চলল ইন্টারনেটে অনুসন্ধানও। উঠে এল পুলবাজার, মিরিক, কার্শিয়াং, কালিম্পং-১ প্রভৃতি ব্লকের নাম। দেরাদুনের যুবক বললেন, ‘‘পাহাড় হোক বা সমতল, ভোট মানে আতঙ্ক,’’

২০১৭ সালের পর থেকে পাহাড়ের নতুন রাজনৈতিক সমীকরণে আগুন নিভলেও হাতবদল হয় ক্ষমতার। সুবাস ঘিসিংয়ের হাত থেকে বিমল গুরুংয়ের হাতে। এখন তাঁর অনেকটাই নিজের হেফাজতে নিয়েছেন অনীত থাপা। তাঁর দলই এখন পাহাড়ের শাসক। ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (জিটিএ), পুরসভায় ক্ষমতাসীন। একটি বিধানসভা আসনও তাঁদের দখলে। তবে বিরোধীরা বলছেন, পাহাড়ের সন্ত্রাসের চেহারা বদল হলেও, প্রকাশ্য হুমকি-হামলাকমলেও ভিতরে ভিতরে চলছে ‘খেলা’। এলাকা দখলে রাখতে প্রলোভন থেকে হুমকি সবই চলছে। অভিযোগ, জিটিএ সদস্য সতীশ পোখরেল থেকে পরেশ তিরকে সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছেন।

Advertisement

পাহাড়ি গ্রাম সমাজের উন্নয়নের জন্য শাসক দলের প্রার্থীকেই ভোট দিতে বা ময়দানে রাখতে চাপ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। হামরো পার্টির সভাপতি অজয় এডওয়ার্ড বলছেন, ‘‘গ্রামের মাথাদের বলা হয়েছে, কাজ এবং উন্নয়ন তহবিল চাইলে এক প্রার্থীকেই রাখতে হবে।’’ আবার সমতলের ধাঁচে সরকারি কর্মীদের উপরে নানা চাপ চলছে বলেও অভিযোগ। প্রাক্তন জিটিএ প্রধান বিনয় তামাং বলেন, ‘‘এলাকায় এলাকায় সভা করে শাসানো হচ্ছে সরকারি কর্মীদের। শাসক দলকে জেতানোর বন্দোবস্ত না করলে বদলি করা হবে।’’ ভোটের মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের আগে সুকনা, শিমুলবাডিতে প্রার্থীদের অপহরণের চেষ্টা, রাতভর প্রার্থীদের লুকিয়ে রাখা, দলীয় কর্মীকে মারধর, পরিবারকে ভয় দেখানো— কিছুই বাদ যায়নি বলে অভিযোগ। তাই বিমল গুরুংয়ের মতো নেতার মুখে শুনতে হচ্ছে, ‘‘উন্নয়নের তকমা সামনে লাগিয়ে দাদাগিরি-রাজ চলছে পাহাড়়ে। রাজ্যের শাসক দল এদের সঙ্গেই রয়েছে।’’

গত দু’টি ভোটের পরে, শাসকের ‘দাপটে’ বিরোধীরা অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে এ বার পঞ্চায়েতে জোট বেঁধেছেন। সেখানে মন ঘিসিং, অজয় এডওয়ার্ড, বিমল গুরুংরা এক সঙ্গে রয়েছেন। কেন্দ্রীয় বাহিনী ভোটের আগে এবং পরে পাহাড়ে রাখার দাবিও করেছেন রাজ্যপাল, নির্বাচন কমিশনের কাছে। বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তার দাবি, ‘‘আমাকে পর্যন্ত হুমকি দেওয়া হয়েছে। ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী পাহাড়ে টানা রাখতে হবে।’’

নেতারা যখন রাজ্যপাল, নির্বাচন কমিশনে দরবার করতে ব্যস্ত, তখন পাহাড়ে কার্শিয়াং, মিরিকের পাকদণ্ডি বেয়ে চরকি পাক খাচ্ছেন প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার সভাপতি তথা জিটিএ প্রধান অনীত থাপা। তাঁর কথায়, ‘‘ভোটের প্রচার করে, মানুষের সঙ্গে কথা বলে সময় পাচ্ছি না। আর বাড়িতে বসে বসে বিরোধীরা অভিযোগের চিঠি লিখছেন! আগামী ১১ জুলাইপর্যন্ত লিখুন! জনগণের জোটেআমরাই জিতব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement