ফাইল চিত্র
‘‘একদিন লকডাউন, তো অন্য দিন নেই! কোন কোন দিন লকডাউন রয়েছে তা আগাম জানতেও পারি না। এত হিসেব করে চলা মুশকিল। প্রতি রবিবারেই সাপ্তাহিক বাজার করি। তাই এ দিনও বাজার করলাম।’’ রবিবার সকালে রথবাড়ি বাজার ফেরত বিবেকানন্দ পল্লির পঞ্চাশোর্ধ্ব বাসিন্দা অমল সরকারের এমনই বক্তব্য। অমলবাবুর মতই রবিবারের সকালে ইংরেজবাজারের রথবাড়ি থেকে মকদুমপুর সহ সব বাজারেই আছড়ে পড়ল ভিড়। কী আনাজ, কী মাছ বাজার, কোনও খানেই শারীরিক দূরত্ব মানার বালাই নেই। ক্রেতা-বিক্রেতা অনেকেরই মাস্ক নেই। কারও আবার মাস্ক ঝুলছে গলায়।
শনিবার লকডাউন থাকায় দিনভর কার্যত শুনশান ছিল ইংরেজবাজার শহরের রাস্তাঘাট। কিন্তু এ দিন সূর্য উঠতে না উঠতেই প্রথমে শুরু বাইকের দাপাদাপি। তারপর ই-রিকশা, রিকশা, চার-চাকা সবই দেদার চলল।
এ দিকে, শনিবার লকডাউনকে সফল করতে পুলিশ যেমন অনেককে লাঠিপেটা করেছে, তেমনি মানুষদের বাড়ি ঢুকিয়ে দিতে পিছু ধাওয়া করেছে। কিন্তু এ দিন পুলিশের নজরদারি কিন্তু চোখে পড়েনি। ফলে, বাজারে বাজারে স্বাস্থ্যবিধি কার্যত শিকেয় উঠল। পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, সব বাজারেই টহল চলেছে।
চলতি সপ্তাহে রাজ্য সরকারের ঘোষিত পূর্ণ লকডাউন ছিল বৃহস্পতি ও শনিবার। শনিবার লকডাউন পুরোপুরি কার্যকর করতে পুলিশকে মাঠে নামতে হয়েছে। বিধিভঙ্গের অভিযোগে জেলায় অন্তত ২০০ জনকে আটক করা হয়েছে। ভাবা হয়েছিল পুলিশের এই তৎপরতার প্রভাব রবিবার বাজারে অন্তত পড়বে। কিন্তু কিসের কি! রবিবার সকাল থেকেই ভিড় ছিল ইংরেজবাজার শহরের রথবাড়ি বাজার, মকদুমপুর মার্কেট, ঝালঝালিয়া মার্কেট, দুই নম্বর গভর্নমেন্ট কলোনি বাজার, সর্বত্র। আনাজ বাজারের চেয়ে মাছের বাজারে এ দিন ভিড় বেশি চোখে পড়ে। সামাজিক দূরত্ব ছিলই না। ভিড় দেখে মনে হচ্ছিল না জেলায় সংক্রমণ বেড়ে এ দিন আক্রান্তের সংখ্যা দু’হাজার ছাড়িয়ে গেল।
এ দিন সকাল ন’টা নাগাদ রথবাড়িতে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের এক লেনে বসা বাজার থেকে আনাজ কিনে বাড়ি ফিরছিলেন বিবেকানন্দ পল্লির অমল সরকার। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, কেন এ দিন তিনি পড়িমড়ি করে বাজার গেলেন? খুব কি দরকার ছিল? তার উত্তরে তিনি বললেন, ‘‘ঘরে আনাজ শেষ হয়েছে। পাড়ায় পাড়ায় ভ্যানে করে যে সমস্ত আনাজ ও মাছ বিক্রি হয় তার দাম মাত্রছাড়া। তা কিনে খাওয়া সম্ভব নয়। এ ছাড়া সেই ছোট থেকে রবিবার করে সাপ্তাহিক বাজার করার অভ্যাস। তাই এ দিন বাজার করলাম। দরকার ছিল বলেই তো গিয়েছিলাম।’’