Coronavirus

আধপেটা খেয়ে ফেরা-না ফেরার দ্বন্দ্বে রয়েছেন ওঁরা

উত্তর দিনাজপুরের চাকুলিয়ার ঘরধাপ্পার গ্রামের জাকির, মেহেবুব, শামিম আলমরা ২২ জন দিল্লিতে রয়েছেন। একসময় তাঁরা কাশ্মীরে কুলগামে আপেল বাগিচায় কাজ করতেন।

Advertisement

নমিতেশ ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২০ ০৭:০২
Share:

প্রতীকী ছবি

নয়ডার ৪৯ নম্বর সেক্টর। লুচি-তরকারির প্যাকেট নিয়ে পৌঁছল একটি গাড়ি। কয়েকটি বাড়িতে গাদাগাদি করে থাকা কয়েকশো মানুষ বেরিয়ে এলেন। সেই খাবার নিয়ে কাড়াকাড়ি পড়ে গেল। সেই দলেই ছিলেন কোচবিহারের নয়ারহাটের আয়ুব আলি। তিনি বলেন, “লকডাউনের তেইশ দিনের মাথায় লুচি-তরকারি পেলাম। কয়েক দিন কার্যত না খেয়ে ছিলাম।” বহু জায়গায় অবশ্য এখনও সাহায্যের ছিটেফোঁটা পৌঁছয়নি। অভুক্ত রয়েছেন মানুষ। তাঁদের মধ্যেই রয়েছেন দিল্লিতে আটকে পড়া জাকির হোসেন, মেহেবুব আলম, ফিরোজ আলম।

Advertisement

উত্তর দিনাজপুরের চাকুলিয়ার ঘরধাপ্পার গ্রামের জাকির, মেহেবুব, শামিম আলমরা ২২ জন দিল্লিতে রয়েছেন। একসময় তাঁরা কাশ্মীরে কুলগামে আপেল বাগিচায় কাজ করতেন। গত অগস্টে কাশ্মীরে কার্ফুর জেরে বাড়ি ফেরেন। কোনও কাজ জোটেনি। মাস দুয়েক আগে জাকিররা কাজের সন্ধানে পাড়ি দেন দিল্লিতে। কেউ শুরু করেন নির্মাণ শ্রমিকের কাজ, কেউ হোটেলে বা কারখানায়। লকডাউনের জেরে তাঁরা এখন দিল্লিতে আটকে। জাকির বলেন, “খাবার পাচ্ছি না। কার্যত অভুক্ত রয়েছি। বাড়ি ফিরতে চাই।”

মালদহের বাবলার পঁয়ত্রিশ বছরের সুফিয়ান মোমিন রয়েছেন মহারাষ্ট্রের বান্দ্রা পূর্ব এলাকায়। নির্মাণ শ্রমিক তিনি। বলেন, ‘‘মজুরি হিসেবে লকডাউনের আগে যা পেয়েছিলাম, সেই টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। এখন এক বেলা খাবার জোগাড় করতে পারছি না।’’ বান্দ্রা বরহামনগরে থাকা আর এক শ্রমিক সফফর খান বলেন, ‘‘হাতে যা টাকা ছিল, সব শেষ। এক ঘরে ১৫ জন রয়েছি। সকলেই কপর্দকশূন্য।’’ দুই ছেলেকে নিয়ে বান্দ্রা পূর্বে আছেন কালিয়াচকের রান্নুচকের আব্দুস সালাম। তিনি বলেন, ‘‘লকডাউনের তিন দিন পর মা মারা গিয়েছেন। কিন্তু এমনই শোচনীয় পরিস্থিতি যে, মাকে শেষ দেখাটা দেখতে পারলাম না।’’

Advertisement

লকডাউনের জেরে বাড়ির একমাত্র রোজগেরে স্বামী আটকে রয়েছেন কেরলে। জনতা কার্ফুর আগে থেকেই সেখানে কাজ বন্ধ। ফলে বাড়িতে টাকা পাঠাতেও পারছেন না। ফলে দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে অথৈ জলে স্ত্রী। রেশন থেকে পাওয়া চাল দিয়ে কোনও মতে সেদ্ধ ভাত খেয়ে দিন কাটছে আলিপুরদুয়ারের রাজাভাতখাওয়ার বাসিন্দা সন্তোষী ছেত্রীর।

উত্তরবঙ্গের পঞ্চাশ হাজারের বেশি মানুষ এখনও ভিন্ রাজ্যে পড়ে আছেন এমন ভাবে। কবে বাড়ি ফিরতে পারবেন, জানেন না। ফিরেই বা কী করবেন, তা-ও অজানা তাঁদের। ফিরদৌস রহমান বলেন, “আপাতত পরিবারের সঙ্গে থাকতে চাই। বাড়ি ফিরলে কিছু একটা হবে।” তবে সবাই তাঁর সঙ্গে একমত নন। অনেকেই বলছেন, “কাজ না পেলে ফিরে হবেটা কী! ভিন্ রাজ্যেই যেতে হবে।”

(তথ্য সহায়তা: জয়ন্ত সেন, মেহেদি হেদায়েতুল্লা, পার্থ চক্রবর্তী)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement