এনজেপি স্টেশনে দাগ কাটা হচ্ছে। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র
অবশেষে বিভ্রান্তির অবসান ঘটল! মঙ্গলবার বেঙ্গালুরু থেকে বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়ায় এসে পৌঁছতে শুরু করল শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেন। সেই ট্রেনে রয়েছেন উত্তরবঙ্গেরও কিছু শ্রমিক। ট্রেনগুলি আদৌ চলবে কিনা তা নিয়ে গত কয়েকদিন থেকেই বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছিল। পুরুলিয়া এবং বাঁকুড়া থেকে ফেরা উত্তরবঙ্গের শ্রমিকদের বাসে করে বাড়ি ফেরাচ্ছে রাজ্য সরকার।
মঙ্গলবার রাতে শিলিগুড়ি তেনজিং নোরগে বাস টার্মিনাসে বাঁকুড়ার ট্রেনে ফেরা শ্রমিকদের এসে পৌঁছনোর কথা। মঙ্গলবার সারাদিনই তার প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন। শ্রমিকদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়রান্টিনে রাখার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ দফতর।
দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, মঙ্গলবার সকালে বেঙ্গালুরু থেকে একটি ট্রেন বাঁকুড়া এসে পৌঁছয়। আরও একটি ট্রেন মঙ্গলবার রাতে আসার কথা। সেখান থেকে সরকারি বাসে বহরমপুর পর্যন্ত এবং সেখান থেকে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের বাসে শিলিগুড়ি পর্যন্ত আনা হচ্ছে শ্রমিকদের।
কিন্তু যে ট্রেনটি এনজেপি এসে ঢোকার কথা ছিল, সেটি পুরুলিয়ায় কেন ঢুকল?
দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন এবং রেল সূত্রে খবর, বেঙ্গালুরু থেকে ট্রেনটি রওনা হওয়ার পরে জানা যায়, সেখানে উত্তরবঙ্গ নয়, বরং সিংহভাগ শ্রমিকই দক্ষিণবঙ্গের পুরুলিয়া এবং সংলগ্ন এলাকার। তার পরেই বদলে যায় গন্তব্য। প্রশাসন সূত্রে খবর, বাঁকুড়ায় ঢোকা ট্রেনটিতে প্রায় ১৫০ জন শ্রমিক ফিরছেন উত্তরবঙ্গে। তাঁদের শিলিগুড়িতে প্রাথমিক স্ক্রিনিং হবে। তাঁদের কোয়রান্টিনে রেখে লালারসের নমুনা সংগ্রহের কথা ভাবা হয়েছে। কিন্তু এত জনকে কোয়রান্টিনে রাখার জায়গা পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়েই চিন্তা শুরু হয়েছে বিভিন্ন জেলায়। শিলিগুড়ির মহকুমাশাসক সুমন্ত সহায় বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যকর্মীদের পরীক্ষা করার পরেই পদক্ষেপ করা হবে। অন্য জেলার শ্রমিকদের পাঠিয়ে দেওয়া হবে। দার্জিলিং জেলার শ্রমিকদের কোয়রান্টিনে রাখা হবে।’’ শ্রমিকদের ট্রেন ভাড়া নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব।
মঙ্গলবার তিনি একটি বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, ‘‘ট্রেন চালানো নিয়ে নানা টালবাহানা চলছিল। তার পরেও ৮৫ শতাংশ টাকা কেন্দ্র দেবে বলার পরেও শ্রমিকদের প্রচুর টাকা ভাড়া দিয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার শ্রমিকদের প্রতি এ রকম অমানবিক আচরণ না করলেও পারত।’’ মন্ত্রীর দাবি, শিলিগুড়ি এবং দার্জিলিংয়েও দেশের বিভিন্ন জায়গার শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। তাঁদের কোয়রান্টিন কেন্দ্রে রাখার পরে বিনামূল্যে সরকারি বাসে অসম ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক শুভানন চন্দ বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের অনুরোধে ট্রেনটি এনজেপির বদলে পুরুলিয়ায় পাঠানো হয়।’’
আর ভাড়া প্রসঙ্গে রেলকর্তাদের দাবি, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কম যাত্রী নিয়ে ট্রেনগুলি চালানো হচ্ছে। ফেরত যাবে খালি কামরা। ফলে মোট খরচের ৮৫ শতাংশই রেল বহন করছে। যে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে, তা ১৫ শতাংশের হিসেবেই। জেলাশাসক অভিষেক তিওয়ারি বলেন, ‘‘পুরুলিয়ায় মঙ্গলবার রাতে ট্রেন ঢুকবে। সেই ট্রেনে আমাদের জেলায় কত জন আছেন এখনও পরিষ্কার নয়। তবে যত জনই থাকুন না কেন তাঁদের বাসে করে পাঠানো হবে। এখানে পৌঁছনোর পরে তাঁদের সকলকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়রান্টিনে নিয়ে আসা হবে।’’