লকডাউনের শিলিগুড়ি। নিজস্ব চিত্র
গলির এক কোণে ঘুপচি চায়ের দোকান। গত কয়েক দিন ধরে ঝাঁপ ওঠেনি। বৃহস্পতিবার কিন্তু ছবিটা আলাদা। পাত্রে গরম হচ্ছে জল। পাশে ফ্লাস্কে দুধ-চা। দু-এক টিন বিস্কুটও আছে। দোকান ঘিরে তিন-চার জন।
দৃশ্যটা এক লহমায় মনে করিয়ে দিল জনতা কার্ফুর দিন ‘আমরা কি খাব না চা’ ভিডিয়োর কথা। এই দোকানে জড়ো হওয়া লোকজনেরা দেখা গেল ওই প্রসঙ্গ তুলে হাসাহাসি করছেন। দোকানি অবশ্য গম্ভীর। তিনি জানালেন, তিন-চার জনের বেশি একসঙ্গে আসছে না। তা ছাড়া দোকান বন্ধ করে রাখলে খাব কী— প্রশ্ন করলেন তিনি।
এই ভাবেই যেন বৃহস্পতিবার অনেক জায়গা বদলে গেল লকডাউনের শিলিগুড়ি।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, সেবক মোড়, জংশন, সেবক রোডের একাংশ, দুই মাইল, কাছারি রোড, বিধান রোড, হিলকার্ট রোড, বর্ধমান রোড, সুভাষপল্লি, রবীন্দ্রনগর বা স্টেশন ফিডার রোডে এ দিন সকাল থেকে রিকশা, টোটো দাঁড়িয়ে ছিল। অধিকাংশ টোটো বা রিকশা চালকের যুক্তি, রোগী নিয়ে বার হয়েছি। যদিও সেই যুক্তি ঠিক নয় বলেই অধিকাংশের দাবি। গলিগুলিতেও এ দিন লোক চলাচল চোখে পড়ার মতো ছিল, বলছে প্রশাসনেরই একটা অংশ।
কেন হঠাৎ শিলিগুড়িতে এত ভিড়? এই প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনের একটি অংশেও। এ দিন দুপুরের পর পরিস্থিতির কথা বিভিন্ন স্তর থেকে জানতে পেরে পুলিশ কমিশনার ত্রিপুরারি অর্থবকে টেলিফোন করেন রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব। মন্ত্রী বলেন, ‘‘পুলিশ কমিশনারকে বলেছি, শহরের এমন অবস্থা কেন! আপনারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন। আর মানুষের কাছে আমার আবেদন, নিয়ম মেনে ঘরে থাকুন আর সুস্থ থাকুন।’’
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, এ দিন দুপুরে রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিংহের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সে কথা বলেন দার্জিলিঙের জেলাশাসক দীপাপ প্রিয়া পি (তখনও তাঁর বদলির নির্দেশ আসেনি)। ছিলেন পুলিশ কমিশনারও। সেখানে শিলিগুড়ির বর্তমান পরিস্থিতির কথা উঠেছে। স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। সিপি বলেন, ‘‘আমরা চেষ্টা করছি। ধরপাকড়, গ্রেফতার করে কয়েক দিন আগে পরিস্থিতি ঠিক করা হয়েছিল। আবার কিছু লোক নিয়ম ভাঙছেন। এ বার কড়া ব্যবস্থার প্রস্তুতি চলেছে।’’