পাশে: দুঃস্থ পরিবারের হাতে খাবার দিচ্ছেন গোপাল। নিজস্ব চিত্র
ঠেলাগাড়িতে ঝালমুড়ি বিক্রি করে চলে সংসার। লকডাউনে থম্কে সেই গাড়ির চাকা। এমন অভাবেও গ্রামের দুঃস্থ শতাধিক পরিবারের হাতে চাল, আলু, ডাল, সাবান তুলে দিয়ে নজির গড়লেন মালদহের গাজলের ঝালমুড়ি বিক্রেতা গোপালচন্দ্র সাহা।
গাজলের নয়াপাড়া গ্রামে টিনের ছাউনির ঘর গোপালের। তিনি গাজলের বিদ্রোহী মোড়ে প্রায় ২০ বছর ধরে ঠেলাগাড়িতে ঝালমুড়ি বিক্রি করেন। দিনে ৩০০-৪০০ টাকা আয়। তা দিয়েই স্ত্রী, একমাত্র ছেলেকে নিয়ে সংসার। দুর্যোগেও থেমে থাকেনি তাঁর ঠেলাগাড়ির চাকা। কিন্তু লকডাউনে বদলেছে গোপালের রোজনামচা।
নিজে কোনও রকমে দু’বেলা মুখে অন্ন তুললেও গ্রামের অনেকে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন শুনে সাহায্যে এগিয়ে আসেন ওই ঝালমুড়ি বিক্রেতা। গ্রামের দুঃস্থ শতাধিক পরিবারের হাতে চাল, ডাল, আলু, সাবান তুলে দেন তিনি। তাতে জমানো টাকা থেকে প্রায় ১০ হাজার খরচ হয়েছে।
গোপাল বলেন, ‘‘যা আয় হয়, তার থেকে কিছু টাকা সঞ্চয় করে রাখতাম। লকডাউনে রোজগার নেই। দু’বেলা ডাল, আলু-ভাত খেয়েই দিন কাটাচ্ছি। কিন্তু অনেক বাড়িতেই ঠিকমতো উনন জ্বলছে না। অর্ধাহারে দিন কাটছে। তা দেখেই আমার সামর্থ্য অনুযায়ী দু’দিনের খাদ্যসামগ্রী বিলি করেছি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘গরিবই বোঝে গরিবের দুঃখ।’’
তাঁর কাছে সাহায্য নিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন গ্রামেরই বাসিন্দা, চা বিক্রেতা রামচন্দ্র সাহা। তিনি বলেন, ‘‘আমার মতো গোপালেরও দোকান বন্ধ। তার পরেও আমাদের মুখে দু’বেলা খাবার তুলে দিতে তিনি এগিয়ে এসেছেন।’’ গোপালের স্ত্রী উন্নতি বলেন, ‘‘লকডাউন টানা চলতে থাকলে আমাদেরও হয়তো কোথাও খাদ্যসামগ্রী নিতে যেতে হতে পারে। তবে আমার স্বামী মানুষের দুঃখে শামিল হওয়ায় ভাল লাগছে।’’
মালদহের মহকুমাশাসক(সদর) সুরেশচন্দ্র রানো বলেন, “ওঁর এমন কাজে অনেকেই অনুপ্রাণিত হবেন।”