তরমুজ নিয়ে খুদেদের একজন। নিজস্ব চিত্র
রাস্তার পাশে তরমুজ নিয়ে বসেছে চার-পাঁচ খুদে। রাস্তার লোকজনকে ডেকে ওরা বারবার বলে যাচ্ছিল, ‘গোটা দশ, গোটা দশ করে’। কেউ থামলে তাঁদের দিকে করুণ দৃষ্টিতে চেয়ে ওদে্র আর্জি, ‘ভাল তরমুজ, একটা নিন না! তিনটে নিলে ২০ টাকা দিলেই হবে।’ ক্যামেরা দেখে কয়েকজন ভয়ে ছুটে চলে যায় পাশের গাছের আড়ালে। অনেক অভয় দেওয়ার পর সেই আড়াল থেকেই দু’জন ভয়ে ভয়ে জানায়, আর মাত্র কয়েকটা রয়েছে। বিক্রি হলেই ওরা বাড়ি চলে যাবে। শিলিগুড়ি চম্পাসারি এলাকার নিয়ন্ত্রিত বাজারের পাশে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারের ছবি। সেই পাইকারি বাজার থেকে তরমুজ নিয়ে গিয়ে পাশের রাস্তায় বিক্রি করছেন কয়েকজন খুদে।
ওরা তিনজন তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। ওদের মধ্যে একজন রাজ রাই। মাল্লাগুড়ি এলাকায় বাড়ি। স্কুলের নামও রাজ ভুলে গিয়েছে। মাল্লাগুড়ির পাশের একটি প্রাথমিক স্কুলে পড়ে বলে জানাল সে। তার কথায়, কয়েক বছর আগে তার বাবা মারা গিয়েছেন। মা ফাগুনি রাই দিনমজুরের কাজ করতেন। বর্তমানে কাজের অভাবে তিনিও বাড়িতে বসে। কোনওদিন আধপেটা খেয়েও মা-ছেলের দিন কাটে বলে ওর দাবি। তরমুজ বেচে যে লাভ হচ্ছে ভাগ করে নেয়। রাজ বলে, ‘‘স্কুল বন্ধের পর থেকে পড়াশোনাও হচ্ছে না। খেলতেও আর ভাল লাগে না। তাই তরমুজ বিক্রি করছি।’’
পাপ্পু সাহানি চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে ভারতী হিন্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পাপ্পুর দাবি, তার বাড়িতে পড়াতে পারে না কেউ। ফলে বই তুলে রেখেছে। সে বলে, ‘‘স্কুল খুললে আবার পড়ব। এখন তরমুজ বেচেও খেলা হচ্ছে।’’
তাঁর মত অন্য ২-৩ জনও প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়া। তাদের না আছে স্মার্টফোন, না আছে পড়ানোর কেউ। প্রথম দিকে অনলাইন ক্লাস হলেও মোবাইলের অভাবে অংশ নিতে পারেনি। এখন তো সেই স্কুলগুলিতে অনলাইন ক্লাসও হচ্ছে না। ফলে ওদের মতো অনেক পড়ুয়াই বিভিন্ন কাজ করছে বলে ওদের দাবি।
মাল্লাগুড়ির পাশে পাতিকলোনিতে ভারতী হিন্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পাশে আরও একটি নেপালি এবং একটি বাংলা মাধ্যমের প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। সেখানকার এক বাসিন্দা জানান, এলাকার বেশিরভাগ পরিবার খুবই দরিদ্র। এমন অভাবের দিনে ছেলেমেয়েদের খাবার জোগাবে, না পড়ার দিকে খেয়াল রাখবে? তাই ছোটরাও নিজের মতো করে জিনিসপত্র রাস্তায় এ ভাবে বিক্রি করতে বসে।
শিলিগুড়ি শিক্ষা জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ডিআই প্রাণোতোষ মাইতি বলেন, ‘‘শিক্ষকদের খোঁজ রাখতে বলা হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নির্দেশ মতো পড়াশোনা শুরু হবে।’’
ভারতী হিন্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জীবন ভুজেল বলেন, ‘‘অনেকে ফোন করে পড়ুয়াদের সমস্যার কথা জানান। আমদেরও কিছু করার থাকে না।’’