অসহায়: একচিলতে রান্নাঘরে খাবারের চিন্তায়। নিজস্ব চিত্র
পঞ্চায়েত থেকে তিন কেজি চাল পেয়েছেন। কয়েক দিন আগে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা চাল আলু সয়াবিন দিয়ে গিয়েছে। মাঠ থেকে শুশনির শাক তুলে ভেজে খেয়েছেন ভাত দিয়ে। বৃহস্পতিবার সয়াবিনের তরকারি রেঁধে দুপুর ১টার আগেই খাওয়া শেষ করেন বছর সত্তরের সন্ধ্যা বর্মণ। মাটির ছোট্ট বারান্দাটাই বৃদ্ধার রান্নাঘর। পাশে ছোট নাতনি সপ্তম শ্রেণির সর্বাণী বসেছিল।
বৃদ্ধা জানান, কাঁথা সেলাই করে পেট চালান। বাঁ হাতের কয়েকটি আঙুল নেই, চোখে কম দেখেন। একটি কাঁথা সেলাই করতে প্রায় এক মাস সময় লেগে যায়। কাজ শেষে মজুরি ২০০ টাকা। বাকিটা চেয়েচিন্তে চলে। দুই ছেলের আলাদা সংসার। দিনমজুর ছোট ছেলে ধনঞ্জয় বলেন, “বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে মা কারও হাতের ছোঁওয়া খান না। নিজেই রেঁধে খান। জ্বালানি বলতে সম্বল গাছের শুকনো ডাল পাতা”।
তপন ব্লকের গোফনগর পঞ্চায়েতের বর্ধিষ্ণু গ্রাম কাশমুলাই এলাকায় সন্ধ্যা বেমামান। একই অবস্থা অসহায় বৃদ্ধা সুখো মালি, প্রতিবন্ধী বৃদ্ধ সাদেকুল সরকার, হতদরিদ্র নিয়তি বর্মণদের। বৃহস্পতিবার এলাকায় ঢুকতে দেখা গেল ঝড়-বৃষ্টিতে ধুয়ে মাঠের ফসল, রাস্তাঘাট আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। উজ্বলার গ্যাস সিলিন্ডার নিতে গ্রাম সড়কের মোড়ে মহিলাদের ভিড়। দলবেঁধে পুকুরে স্নান করতে নেমে ছেলেমেয়েরা হুটোপুটি করছে। পাড়ার মাচায় বসে বাসিন্দাদের আড্ডা—বছরের আর পাঁচটা দিনের মতোই চলছে কাশমুলাইয়ের জীবনযাপন। সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই।
তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি সুকুমার দেবনাথের কথায়, “এই গ্রাম থেকে বাসিন্দাদের ভিন্ রাজ্যে কাজে যেতে হয় না বললেই চলে। তাই করোনার তেমন ভয় নেই গত বছর ১০০ দিনের প্রকল্পে ১০০ দিনই কাজ পেয়েছেন জবকার্ডধারীরা”। এ বছর ইতিমধ্যে দেড় লক্ষের উপরে শ্রমদিবস হয়ে গিয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
ঝাঁ চকচকে পাকা রাস্তা, গ্রামজুড়ে বিদ্যুতের সংযোগে চোখে পড়ে তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান সুরেশ বর্মণের গ্রাম উন্নয়নের দাবি। কিন্তু সন্ধ্যার মতো আধার কার্ড হয়নি প্রতিবন্ধী পঁয়ষট্টি বছরের সাদেকুলেরও। পাননি প্রতিবন্ধী ভাতাও। কিন্তু পঞ্চায়েত থেকে তাঁদের ঘর ও সারাবছরের সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়।
আদিবাসী পাড়ার একাধিক বাসিন্দা জানান, তাঁদের অধিকাংশের ডিজিটাল রেশনকার্ড হয়নি। লকডাউনে চাল পেলেও তা ফুরিয়ে আসছে। বোরোর চাষ শেষ। মাঠে কাজ নেই। তাঁদের অভিযোগ, ১০০ দিনের কাজ চেয়েও মিলছে না। ‘লকডাউনহীন’ কাশমুলাইয়ে হতদরিদ্র সন্ধ্যা, নিয়তি, সুখোদের পাশাপাশি ভ্যান চালক বিধু বর্মণ, বিএপাশ দিনমজুর হাকিম বর্মণেরা তাই বেমানান হয়ে থাকছেন।