মানবিক: ত্রাণ দিচ্ছেন বাসারাতে রমাজান। নিজস্ব চিত্র
জন্ম থেকেই চলচ্ছক্তিহীন। হাতে ভর করে স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে এখন কলকাতার আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ পড়ছেন বাসারাতে রামাজান। অভাবের সংসার। তাকে সঙ্গী করে চলছে জীবনযুদ্ধ। মনের সেই শক্তিতেই এ বার করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছেন উত্তর দিনাজপুরের চাকুলিয়ার ওই যুবক।
সব সময়ের ভরসা ট্রাইসাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ছেন তিনি। ঘুরছেন গ্রামে গ্রামে। কেউ অভাবে, অর্ধাহার-অনাহারে রয়েছেন শুনেই যাচ্ছেন তাঁদের পাশে। দিচ্ছেন খাদ্যসামগ্রী। আবার অসহায় কারও হাতে পৌঁছে দিচ্ছেন ওষুধ। বাজার বা ব্যাঙ্কে সামাজিক দূরত্ব না মানা হলে তার ছবি তুলে ফোন করে জানাচ্ছেন পুলিশকে। পুলিশও ব্যবস্থা নিচ্ছে। এই লড়াইয়ের জন্য সাত জনের দল গড়েছেন তিনি।
চাকুলিয়ার হাসপাতালপাড়ার বাসিন্দা বাসারতে। বাড়ির সামনে ছোট দোকানে কম্পিউটার নিয়ে বসেন। ইন্টারনেটে কেউ কাজ করতে এলে তা থেকে যৎসামান্য আয়। মাসে এক হাজার টাকা প্রতিবন্ধী ভাতা পান। কিছু জমানো টাকাও ছিল। সেই সঞ্চয় ভেঙেই লকডাউনে অসহায় দুঃস্থদের খাদ্যসামগ্রী বিলি করছেন তিনি।
বাবা শিস মুরতাজ বলেন, ‘‘প্রতিবন্ধকতা কখনওই দমাতে পারেনি ছেলেকে।’’
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ জানান, ছোটবেলা থেকে অসহায় মানুষের পাশে থাকা যেন বাসারতের নেশা। এর আগে তিনি চাকুলিয়ায় কলেজের দাবিতে সরব হয়েছিলেন। শারিরীক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও কী ভাবে তিনি পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন, সে কথা তুলে ধরে শিশুশ্রমিকদের স্কুলে ফেরানোর বিষয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে অভিভাবকদের বুঝিয়েছেন।
বাসারতের এই লড়াইয়ের শামিল ইসলামপুর কলেজের ছাত্র হুমায়ুন আলিও। তিনি বলেন, ‘‘ওঁকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে মানুষের সেবায় নিজেকে জুড়তে পেরে ভাল লাগছে। অনেক অসহায় মানুষ লকডাউনে বাড়ি থেকে বেরোতে পারছেন না। অনেকের নেই কাজ। তাঁদের ঘরে খাবার, ওষুধ পৌঁছে দিচ্ছি।
চাকুলিয়ার বিধায়ক আলি ইমরান রমজ (ভিক্টর) ও তৃণমূল ব্লক সভাপতি মিনাহাজ আরফিন আজাদ বলেন, ‘‘বাসারতকে কুর্নিশ।’’
গোয়ালপোখর-২ ব্লকের বিডিও কানাইয়াকুমার রায় বলেন, ‘‘এমন মানসিকতা সত্যিই দৃষ্টান্ত।’’