প্রতীকী ছবি।
একে একে নাম আসছিল। সবার হাতে তুলে দেওয়া হল করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষার কিট। সেই কিট খুলে হতভম্ব এক কন্ডাক্টর বলে ওঠেন, “আরে এটা তো রেনকোট! বাড়িতে পুরনো একটা আছে। এটা দিয়ে করোনা আটকানো যাবে?” ততক্ষণে সবাই কিট খুলে ফেলেছিলেন। একজন তো গ্লাভস নিয়ে পড়ার চেষ্টা করতেই তা ছিঁড়ে যায় বলে অভিযোগ। অনুনয়-বিনয় করেও দ্বিতীয়টি পাননি তিনি। ক্ষুব্ধ কর্মীরা প্রশ্ন করতে শুরু করেন, “এভাবে ডিউটি করা যায় নাকি?” উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন নিগমের কর্মীদের অনেকেরই এমন অভিযোগ নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে।
অভিযোগ, চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের বাতিল করা রেনকোট নিগম-কর্মীদের উপরে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিগমের চেয়ারম্যান অপূর্ব চৌধুরী বলেন, “সরকার আমাদের যা বরাদ্দ করেছে, আমরা সেটাই দিয়েছি। তাতে অসুবিধে হওয়ার কথা নয়।”
কর্মীরা জানিয়েছেন, ডিউটি চলাকালীন ওই রেনকোট পরে থাকতে বলা হয়েছে। কিন্তু গরমের মধ্যে ওই রেনকোট পরে থাকা কার্যত অসম্ভব। এক কন্ডাক্টরের কথায়, “গাড়ির ভিতরে দমবন্ধ হয়ে আসছে আমাদের। আর যতদূর জানি, এই রেনকোট দিয়ে করোনাভাইরাস আটকানো সম্ভব নয়। এটা নিয়ে চিকিৎসকদের বিক্ষোভও হয়েছিল। তাহলে এগুলি আমাদের দেওয়ার মানে কী?” আরেক কর্মী বলেন, “আমার গ্লাভস ছিঁড়ে গিয়েছে। আর দ্বিতীয়বার পাচ্ছি না। বলা হচ্ছে একবারের জন্যই তা বরাদ্দ।” কিছুদিন আগেই পিপিই-র জায়গায় রেনকোট দেওয়া নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকরা। পরে সেই রেনকোট বাতিল করে দিয়ে পিপিই বরাদ্দ করা হয়। অভিযোগ, সেই বাতিল রেনকোট স্বাস্থ্য দফতরের কাছে রয়েছে। সেগুলিই নিগমের কর্মীদের দেওয়া হচ্ছে। চারদিন ধরে সরকারি নির্দেশে বাস চলাচল শুরু করা হয়েছে। বেসরকারি অবশ্য একটিও পথে নামে নামেনি। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে যাত্রীদের বসার ব্যবস্থা করে সরকারি বাস চলাচল শুরু হয়েছে। কর্মীদের অভিযোগ, বাসে নানা জায়গা থেকে মানুষ ওঠানামা করবেন। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা না থাকলে তাঁদের বিপদে পড়তে হতে পারে।
আইএনএনটিটিইউসির এনবিএসটিসি কর্মী সংগঠনের সহকারী সম্পাদক দীপেশ দাস জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টরের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, “আমাদেরও অনেক কর্মী অভিযোগ জানিয়েছেন। স্বাস্থ্য দফতর থেকেই ওই সুরক্ষার সরঞ্জাম দেওয়া হয়েছে। তার পরেও আমরা বিষটি ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে জানিয়েছি।”
সিটু অনুমোদিনত এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি-জগৎজ্যোতি দত্ত বলেন, “কর্মীদের সুরক্ষার বিষয়ে নিগম কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছিলেন। এখন অনেকেই অভিযোগ করছেন। ম্যানেজিং ডিরেক্টরের কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাব।”