প্রতীকী ছবি
বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে আমরা তিন ভাই প্রায় পঁচিশদিন ধরে ঘরবন্দি। লকডাউনের যে বিধি সরকার বাতলে দিয়েছে তা তো মানতেই হচ্ছে। কিন্তু আমার লটারির টিকিট বিক্রিও বন্ধ করে দিতে হল। আমাদের সংসারের আয়ের একমাত্র উত্স। কিন্তু পেট তো এসব শুনবে না। বাধ্য হয়েই মায়ের পুরনো সেলাইয়ের মেশিন বের করে কাপড় কেটে মাস্ক তৈরি শুরু করেছি। তাতে দু-বেলার চাল-ডাল কেনাটা অন্তত হচ্ছে।
ভাইদের মধ্যে দ্বিতীয়। নানা কারণেই সংসারের মূল ভার আমার কাঁধেই। আমার দাদা অনেক ছোট থেকেই গাড়ি চালায়। তবে সেইরকম আয় ছিল না কোনওদিন। তবে অন্যের গাড়ি চালিয়ে নিজের খাওয়া-পরাটা ওর চলে যাচ্ছিল। আমার লটারির ব্যবসাও ধীরে ধীরে জমতে শুরু করেছিল। এলাকার বহু গরিব যুবক আমার কাছ থেকে টিকিট নিয়ে বিক্রি করতে শুরু করল। সব মিলিয়ে বেশ কয়েকটি সংসার আমার উপর নির্ভরশীল বলা যায়।
কিন্তু লকডাউন শুরু হতেই সব কিছুই যেন আচমকা বদলে যেতে শুরু করল। বাইরে বেরনো বন্ধ। ফলে বন্ধ হয়ে গেল আমার ব্যবসা। আয়ও বন্ধ হয়ে গেল। একেবারে অথৈ জলে পড়ে গেলাম আমরা চারটে প্রাণ। কী করে পেট চালাব সেই ভাবনাতেই ঘুম আসত না কয়েকদিন।
এরই মধ্যে আচমকা মনে পড়ে গেল, ঘরে তো মায়ের একটা সেলাই মেশিন রয়েছে! সেটাকে তো এই বিপদে কাজে লাগানো যায়!
ওটা বের করে ঝাড়পোঁচ করলাম। যদিও আমরা তিন ভাইয়ের কেউ কোনদিন ওই মেশিনে কিছু সেলাই করিনি। কিন্তু মা যখন বেঁচে ছিলেন, তখন তাঁকে মেশিনে জামা-কাপড় সেলাই করতে দেখতাম। কীভাবে মেশিন ঘুরিয়ে সেলাই করতেন, সেটা মনের মধ্যে ছিল। সেটাই একটু দিন-দুয়েক ঝালিয়ে নিলাম। এরপর ওই মেশিনে কাপড় সেলাই করে মাস্ক তৈরি শুরু করলাম। এখন বাড়ির সামনে বসে সেই মাস্ক বিক্রি করছি। তাতে যে খুব একটা আয় হচ্ছে তা বলব না। তবে কোনওমতে পেটটা চালাতে পারছি সবাই মিলে। প্রতিদিনের চাল-ডাল আর নুনটা কেনার টাকাটা কোনও রকমে উঠে যাচ্ছে।
তবে মায়ের সেলাই মেশিনটা এই দুর্দিনে যেন আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ হয়ে উঠেছে আমাদের হতদরিদ্র সংসারে! না হলে যে কোথায় কার কাছে হাত পাততে হত, কে জানে।