Coronavirus

বাড়িতে আসেনি টাকা, টানাটানি

কিন্তু লকডাউনে সব হিসেব ওলটপালট হয়ে গিয়েছে। স্বামী ও দুই ছেলে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।

Advertisement

জয়ন্ত সেন 

শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২০ ০৬:২১
Share:

শিশুদের নিয়ে সাবিনা। নিজস্ব চিত্র

স্বামী ও দুই ছেলে মুম্বইয়ের বান্দ্রায় নির্মাণশ্রমিকের কাজ করেন। তাঁরা টাকা পাঠালে তবেই দুই মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে সংসার চালান কালিয়াচকের হারুন বিশ্বাসপাড়ার জাকিরা বিবি।

Advertisement

কিন্তু লকডাউনে সব হিসেব ওলটপালট হয়ে গিয়েছে। স্বামী ও দুই ছেলে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। তাঁদেরও হাতে টাকা নেই। এ মাসে বাড়িতেও টাকা পাঠাতে পারেননি। তার জেরে দুই মেয়েকে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন জাকিরা। কী করে সংসার চলবে তা ভেবে পাচ্ছেন না তিনি। অভিযোগ, ওই পাড়ার অন্য বাসিন্দারা বিনা পয়সায় রেশন পেলেও তাঁদের রেশন কার্ড না থাকায় তা তাঁরা পাচ্ছেন না। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, প্রতিবেশীদের কাছ থেকে কখনও চাল, কখনও টাকা ধার নিয়ে কোনরকমে চলছে সংসার। জাকিরা বলেন, "প্রতি মাসে স্বামী টাকা পাঠান। এখন তাঁদের হাতেই কোনও টাকাপয়সা নেই। তাঁরাই দু’বেলা পেট ভরে খেতে পাচ্ছেন না। আমাদের টাকা পাঠাবেন কী করে? আশপাশের বাসিন্দাদের কাছ থেকে কখনও চাল বা টাকা ধার নিয়ে কোনও রকমে আধপেটা খেয়ে বেঁচে আছি।"

জাকিরার বাড়ির কাছেই বাড়ি রিয়াজউদ্দিন মোমিন নামে এক নির্মাণশ্রমিকের। তিনিও মুম্বইয়ের বান্দ্রায় রয়েছেন। তিনি টাকা পাঠালে দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে সংসার চালান স্ত্রী সাবিনা বিবি। লকডাউনের পর থেকে কর্মহীন হয়ে পড়েছে রিয়াজও। এ মাসে তিনিও টাকা পাঠাতে পারেননি স্ত্রীকে। ফলে দুই সন্তানকে নিয়ে অসহায় অবস্থায় সাবিনা। শুধু জাকিরা বা সাবিনার ঘরেই নয়, এই পরিস্থিতি কালিয়াচকের তিনটি ব্লক সহ মালদহ জেলার বিভিন্ন ব্লকের ঘরে ঘরে।

Advertisement

মালদহ জেলার হাজার হাজার মানুষ পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে ভিন্‌ রাজ্যে রয়েছেন। কেউ রয়েছেন মহারাষ্ট্রে, কেউ রয়েছেন দিল্লি, তেলঙ্গানা, হিমাচলপ্রদেশ, গোয়া, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত-সহ বিভিন্ন রাজ্যে। মূলত বহুতল নির্মাণ কাজের সঙ্গে যুক্ত সকলে। জানা গিয়েছে, ওই শ্রমিকেরা ভিন্‌ রাজ্যে থাকলেও তাঁদের পরিবারের লোকজন এই জেলাতেই বসবাস করছেন। ভিন্‌ রাজ্য থেকে ওই পরিযায়ী শ্রমিকেরা টাকা পাঠালে তবেই তাঁদের সংসার চলে। কিন্তু লকডাউন হওয়ার পর থেকে সমস্ত নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওই শ্রমিকেরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। আচমকা দেশ জুড়ে লকডাউন হওয়ায় তার আগে তাঁরা যে কাজ করেছিলেন সেই মজুরিও অনেক শ্রমিক পাননি। ফলে কার্যত কপর্দকশূন্য অবস্থায় থাকা ওই শ্রমিকরা কেউ অর্ধাহার বা কেউ একবেলা খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন বলে অভিযোগ। আর বাড়িতে তাঁরা টাকা না পাঠাতে পারায় পরিবার-পরিজনেরাও অসহায় পরিস্থিতিতে পড়েছেন।

মালদহ জেলা প্রশাসনের এক কর্তা অবশ্য বলেন, "যে সমস্ত পরিবারের রেশন কার্ড রয়েছে তাঁরা বিনামূল্যে রেশন পাচ্ছেন। যাঁরা রেশন কার্ডের জন্য আবেদন করেছেন তাঁদেরও খাদ্যসামগ্রী দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। ফলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। ভিন্‌ রাজ্যের বিষয়টি রাজ্য সরকারের তরফে দেখা হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement