প্রতীকী ছবি
মুখ্যমন্ত্রী মাঝে মাঝেই বলেন, সীমান্ত ঘেরা উত্তরবঙ্গ।
বাস্তবিকই তিন দেশের সীমান্ত ছড়িয়ে রয়েছে উত্তরবঙ্গের আট জেলায়। মহদিপুর, হিলি, ফুলবাড়ি এবং কোচবিহারের চ্যাংরাবান্ধায় সীমান্ত রয়েছে বাংলাদেশের সঙ্গে। পানিট্যাঙ্কিতে নেপাল ও জয়গাঁয় রয়েছে ভুটান সীমান্ত। কেন্দ্র সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধের কথা না বললেও কার্যত বন্ধ পড়ে রয়েছে সীমান্তগুলি। হয় বাংলাদেশ নতুবা নেপালে করোনার জেরে আমদানি বন্ধ। ফলে শুরু হয়েছে লোকসান। অঙ্কের হিসেবে তা খুব কম করেও হাজার কোটি টাকা।
ওয়েস্ট বেঙ্গল এক্সপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশনের সচিব উজ্জ্বল ঘোষ বলেন, ‘‘সমস্ত সীমান্ত কার্যত বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। সারি সারি ট্রাক। কবে কী পরিস্থিতি হবে কেউ ঠিক জানেন না। রোজ ক্ষতির অঙ্ক বেড়েই চলেছে।’’
ধরা যাক দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলির কথা। হিলি এক্সপোর্টাস অ্যান্ড কাস্টমস ক্লিয়ারিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৩ মার্চ থেকে সেখানে বাংলাদেশের সঙ্গে বহির্বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যার জেরে রোজ প্রায় ১৪ কোটি টাকার ব্যবসা মার খাচ্ছে। সরকারের রোজ ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ১২ লক্ষ ডলার। এখন পর্যন্ত এই পথে বহির্বাণিজ্যে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। তা শেষ অবধি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, ক্ষতি পূরণই বা হবে কী করে, জানেন না ব্যবসায়ীরা।
দার্জিলিং জেলার পাশে ফুলবাড়িতে বাংলাদেশ সীমান্ত, অন্য প্রান্তে রয়েছে পানিট্যাঙ্কিতে নেপাল সীমান্ত। ২-৩ দিনে আগেও হাতে গোনা ট্রাক নিত্যপণ্য নিয়ে নেপালে যাচ্ছিল। কিন্তু নেপালেও করোনা সংক্রমণের সন্ধান মিলেছে। তাই এখন সব অনিশ্চিত। ক্ষতি অঙ্ক ১০ কোটি টাকা রোজ। কোচবিহারের ক্ষেত্রে যা রোজ প্রায় ৩ কোটি। মালদহে অঙ্কটা প্রতিদিন প্রায় ২৫ কোটি টাকা।
ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, নোটবন্দির ধাক্কা দিয়ে শুরু হয়েছিল অনিশ্চয়তা। তার পর জিএসটি, আর্থিক ঝিমুনি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মিলিয়ে ২০১৯-২০ সালে ব্যবসা মার খেয়েছে। মাঝে পাথর তোলাও বন্ধ হয়ে যায় উত্তরের নদী থেকে। তাতে বাংলাদেশে রফতানির এক নম্বরে থাকা পাথর সরবরাহে ভাটা পড়ে। কোটি কোটি টাকা ক্ষতি হয়। গত এক বছরে ব্যবসার পরিমাণ কমেছে ২৫-৩০ শতাংশ।
বণিকসভা সিআইআই-র উত্তরবঙ্গের চেয়ারম্যান সঞ্জিত সাহা বলেন, ‘‘আর দশটা ব্যবসা বা শিল্পের মতো সীমান্ত বাণিজ্যও প্রায় বন্ধ হয়ে রয়েছে। বিরাট সংখ্যক মানুষ অনিশ্চয়তা নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন।’’
তথ্য সহায়তা: অনুপরতন মোহান্ত, জয়ন্ত সেন ও নমিতেশ ঘোষ