বিধি ভুলে: মাস্ক নেই মুখে। ময়নাগুড়িতে শুক্রবার। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।
দেশের উত্তর-পূর্ব অংশে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। যার জেরে উত্তরবঙ্গ দেশ ও রাজ্যে তৃতীয় ঢেউয়ের ‘করিডোর’ হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বিভিন্ন মহল। এই পরিস্থিতিতে অসম সীমানা লাগোয়া কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ার জেলায় বিশেষ সতর্কতা নিচ্ছে প্রশাসন। মাস্ক ছাড়া বাইরে না-বেরনো, দূরত্ব-বিধি, স্বাস্থ্য-বিধি মেনে চলার মতো জনসতর্কতায় নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে। মানুষজনের কাছেও সমস্ত স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার আবেদন করা হয়েছে।
শুক্রবার, বিডিওদের নিয়ে একটি বৈঠক করেন কোচবিহারের জেলাশাসক পবন কাদিয়ান। সেখানে অসম লাগোয়া জেলার গ্রামগুলিতে বাড়তি নজর রাখার কথা বলা হয়। জেলাশাসক বলেন, “সমস্ত সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। সীমানা এলাকায় বিশেষ নজর রাখতে বলা হয়েছে। পাশের রাজ্য লাগোয়া গ্রামের সংক্রমণ তথ্য পর্যালোচনায় জোর দেওয়া হয়েছে।” আলিপুরদুয়ারের সিএমওএইচ গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “তৃতীয় ঢেউ নিয়ে আমরা সতর্ক রয়েছি। সমস্ত সাবধানতার দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সকলকেই স্বাস্থ্যবিধি কড়াভাবে মেনে চলতে হবে।” কোচবিহারের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুকান্ত বিশ্বাস বলেন, “সতর্কতার ব্যাপারে প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ হচ্ছে।’’
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, অসমের দিক থেকে যে সব গাড়ি আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার জেলায় আসছে, সেখানে যাত্রীদের উপর নজরদারি রাখা হচ্ছে। উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে বিভিন্ন ট্রেনে আসা যাত্রীদের জন্য আলিপুরদুয়ার জেলার বিভিন্ন রেল স্টেশনে ও কোচবিহারের নিউ কোচবিহার স্টেশনে নজরদারি বাড়ান হয়েছে। তাঁদের র্যাপিড টেস্টও করানো হচ্ছে। আলিপুরদুয়ার জেলার স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, বাইরের রাজ্য থেকে যাঁরা আসছেন, তাঁদের আরটিপিসিআর নেগেটিভ রিপোর্ট না থাকলে, করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পরীক্ষার রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত ওই যাত্রীদের নিভৃতবাসে রাখা হচ্ছে। উত্তরবঙ্গ পরিবহণ নিগম সূত্রে জানা গিয়েছে, তাদের আন্তঃরাজ্য বাস পরিষেবা বন্ধ রয়েছে। তাই বাস যাত্রীদের র্যাপিড টেস্টের কোনও ব্যবস্থা এখনও শুরু হয়নি।
অভিযোগ, দুই জেলাতেই বাসিন্দাদের একাংশের মাস্ক ব্যবহার নিয়ে উদাসীনতা রয়েছে। এই প্রবণতা বন্ধে আলিপুরদুয়ারে পুর এলাকায় জরিমানা চালু হয়েছে। কোচবিহারের বিভিন্ন এলাকাতেও মাস্কহীনদের বিরুদ্ধে অভিযান হচ্ছে। কোচবিহারের সদর মহকুমাশাসক তথা কোচবিহার পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারপার্সন রাকিবুর রহমান বলেন, “মাস্কহীনদের বিরুদ্ধে অভিযান হচ্ছে। কোচবিহার পুরসভা এলাকায় প্রায় রোজই আর্থিক জরিমানা করা হচ্ছে।” আলিপুরদুয়ার পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান মিহির দত্ত বলেন, “মাস্ক ছাড়া কেউ বাইরে বের হলেই তাঁকে জরিমানা করা হচ্ছে।”
মাদারিহাটের বিডিও শ্যারন তামাং বলেন, “মাস্ক পরা নিয়ে আমরা নিয়মিত মানুষকে সচেতন করছি। কেউ মাস্ক ছাড়া রাস্তায় বের হলে মামলা করা হবে।” স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার কথায়, ট্রেন, বাস যাতায়াতের রুট বলে কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার তৃতীয় ঢেউয়ের করিডোর হয়ে গেলে উত্তরের অন্য জেলাতেও সংক্রমণ আশঙ্কা বাড়বে। তাই সতর্কতায় কোন ফাঁক রাখা যাবে না। প্রশাসনের তরফেও দুই জেলার মানুষজনকে সতর্ক করে কড়া ভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আবেদন করা হয়েছে।