নিজস্ব চিত্র।
তাঁর বদলির নির্দেশ জেলায় এসেছিল বুধবারই। তার পরে সামাজিক মাধ্যমে আলিপুরদুয়ারের সিএমওএইচ পূরণ শর্মার বক্তব্য, জেলার অন্য লোকজনের প্রতিবাদ, বৃহস্পতিবার জেলা স্বাস্থ্য দফতরের সামনে একটি নাগরিক সংগঠনের বিক্ষোভ এবং নির্দেশ প্রত্যাহারের জন্য স্বাস্থ্য দফতরের প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারিকে চিকিৎসকদের একটি সংগঠনের চিঠির পরেও প্রশাসন তাদের সিদ্ধান্তে অনড়। এত কিছুর মধ্যেই জেলার ডেপুটি সিএমওএইচ ১-কে দ্রুত দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছে।
কী লিখেছিলেন পূরণ শর্মা? তিনি সামাজিক মাধ্যমে ইংরেজিতে যা লেখেন, তার নির্যাস: ‘আমার কাজের জন্য আমাকে পুরস্কৃত করা হল আমার নিজের শহর থেকে দূরে পাঠিয়ে, আমার অসুস্থ বাবা-মায়ের থেকেও আমি দূরে চলে গেলাম যার জন্য আমি স্বেচ্ছাবসরের আবেদন করেছিলাম। এই কি পুরস্কার? এই কি ন্যায়? ঈশ্বর আমাদের রক্ষা করুন!’
তাঁর এই পোস্টের নীচেই কমেন্ট করেন কোচবিহারের সিএমওএইচ সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়ের স্ত্রী শিখাদেবী। তিনি লেখেন, ‘আমি কোথাওই ঈশ্বরকে দেখতে পাচ্ছি না। আমি আমার স্বামীকেও ইস্তফা দিতে বলেছি। তবে জানি না তিনি কী করবেন।’ একই সঙ্গে তিনি নিজের অসুস্থ শাশুড়ির কথা তুলে জানান, ‘আমার শাশুড়ির ৮৬ বছর বয়স। তিনি আপনার বাবা-মায়ের মতোই অসুস্থ। সরকার সেটা জানে।’ সব শেষে শিখাদেবী বলেন, ‘তারা (সরকার) একনিষ্ঠ কর্মীদের মেরে ফেলতে চাইছে।’
দু’দিন আগে যে পূরণ স্বেচ্ছাবসরের আবেদন করেন, তার পিছনে তাঁর অসুস্থ বাবা-মাকে সময় দেওয়ার বিষয়টি ছিল বলেই তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠমহলে জানিয়েছিলেন। পাঁচ বছর তিনি এই জেলার সিএমওএইচ পদে আছেন। কিন্তু সম্প্রতি করোনা মোকাবিলায় পদক্ষেপ করতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে জেলার তৃণমূল নেতাদের একাংশের ঠোকাঠুকি লাগে বলে দাবি। জেলার অনেকেই বলছেন, স্বেচ্ছাবসরের আবেদনের পিছনে প্রধান কারণ সেইটিই।
সেই আবেদন অবশ্য মানা হয়নি। বরং এক দিন পরে পূরণকে কলকাতার পাস্তুর ইনস্টিটিউটে বদলি করা হয়। এরই প্রতিবাদে এ দিন উত্তাল হয় জেলা। স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশের কথায়, রাজনীতির শিকার হলেন সিএমওএইচ। জেলার শীর্ষ স্বাস্থ্যকর্তার এই বদলির প্রতিবাদে এ দিন দুপুরে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের সামনে অবস্থান করে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সেখানে গিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি মৃদুল গোস্বামী। তিনি বলেন, ‘‘সরকারি নিয়মেই রুটিন বদলির বিষয়টি রয়েছে। দীর্ঘদিন জেলায় থাকার পর আলিপুরদুয়ারের সিএমওএইচেরও রুটিন বদলি হয়েছে। বিষয়টি আন্দোলনকারীরাও বুঝতে পেরেছেন।’’
বদলির নির্দেশ প্রত্যাহার করার দাবিতে বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য দফতরের প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারিকে চিঠি দিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন অব হেল্থ সার্ভিস ডক্টর্স। সংগঠনের সম্পাদক মানস গুমটা বলেন, ‘‘করোনা মোকাবিলায় আলিপুরদুয়ার মডেলকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন সিএমওএইচ পূরণ শর্মা, যে মডেলকে প্রশাংসা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। কিন্তু কোভিড যুদ্ধে সংকটজনক পরিস্থিতির সময় পূরণ শর্মাকে এমন একটা জায়গায় বদলি করা হল, যার সঙ্গে করোনার কোনও সম্পর্ক নেই।’’
প্রশ্ন উঠেছে, পূরণের বদলিতে কি ধাক্কা খাবে জেলার করোনা-যুদ্ধ? সরাসরি তার জবাব না দিয়েও অনেকে বলছেন, এই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হওয়াটাই অবাঞ্ছনীয়।