বছর দেড়েক আগে আমাদের পরিচয় হয়েছে ‘করোনাভাইরাস’ শব্দটির সঙ্গে। দেশের মানুষের সামনে ফের নতুন এক উপসর্গ হাজির, ‘মিউকরমাইকোসিস’। ছত্রাক জাতীয় এই সংক্রমণ কতটা বিপজ্জনক তা নিয়ে চিন্তা বাড়ছেই। উত্তরবঙ্গের পরিবেশে এই ছত্রাকের সংক্রমণ কি আগে ছিল? চিকিৎসাই বা কী? শেখর চক্রবর্তী, রাধেশ্যাম মাহাতো, পূরণ শর্মার মতো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছে খোঁজ নিল আনন্দবাজার।
এই ছত্রাকের সংক্রমণ কি আগে উত্তরবঙ্গে ছিল?
পূরণ শর্মা: এই ছত্রাক নতুন নয়। তবে তরাই এবং ডুয়ার্সে কয়েক দশক কাজ করেছি। এ ধরনের সংক্রমণের বিষয়টি কখনও শুনিনি। কোভিড পরিস্থিতিতে শোনা যাচ্ছে।
শেখর চক্রবর্তী: গত বছর কোভিডের সময় শিলিগুড়িতে অন্তত তিনজনের হয়েছিল। একজন মারাও যান।
পরিবেশের উপর কতখানি প্রভাব পড়তে পারে?
রাধেশ্যাম মাহাতো: পরিবেশটা ছত্রাকের সংক্রমণের অনুকূল। উত্তরবঙ্গে স্যাঁতসেতে, বনজঙ্গল ঘেরা এলাকা। ঝুপড়ি, চা বাগান এলাকায় যাঁরা থাকেন, অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকেন। অপুষ্টি রয়েছে। তবে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমলেই এ ধরনের ছত্রাকের সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়ে।
কোভিড পরিস্থিতিতে এই ছত্রাকের সংক্রমণের কারণ?
পূরণ শর্মা: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, এইচআইভি রোগী, কোনও অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, ডায়াবেটিস রয়েছে এসব ক্ষেত্রে এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশের অভাবে সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে। কোভিডের জন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনিয়মিত হয়ে পরে। আমাদের রক্ত নালিকায় রক্ত জমতে থাকলে রক্ত সরবরাহ ব্যাহত হবে। থ্রম্বোসিস ঘটে। তাতে শরীরের প্রত্যন্ত অংশে রক্ত সরবরাহ ব্যাহত হলে সেখানকার কোষ মরে যায়। মৃত কোষে, স্যাঁতসেতে পরিবেশে ছত্রাক সংক্রমণ ঘটার পক্ষে আদর্শ।
শেখর চক্রবর্তী: নতুন কোনও অসুখ নয়। শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে এই ধরনের ছত্রাকের সংক্রমণ ঘটে। কোভিড পরিস্থিতিতে এখন ব্যাপক স্টেরয়েডের ব্যবহার হচ্ছে। বহু লোক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই এই ছত্রাকের সংক্রমণ বেশি দেখা যাচ্ছে।
এর চিকিৎসা কী আছে?
শেখর চক্রবর্তী: ভয় পাওয়ার কিছু নেই। শুরুতেই সংক্রমণ চিহ্নিত করে চিকিৎসা করতে হবে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। স্টেরয়েড নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার করতে হবে। তা হলে সমস্যা হবে না। অনিয়ন্ত্রিত স্টেরয়েড ব্যবহার হলে ওই সংক্রমণ ঘটবে।
রাধেশ্যাম মাহাতো: এই ছত্রাকের সংক্রমণের চিকিৎসায় অ্যাম্পোটেরসিন-বি ওষুধ ব্যবহৃত হয়।
কী উপসর্গ দেখে সতর্ক হতে হবে ?
রাধেশ্যাম মাহাতো: নাক বন্ধ হওয়া, নাক দিয়ে কালো বা লালচে সর্দি বার হওয়া। নাকে-মুখে ব্যথা। মুখের একদিক ফুলে যেতে পারে। চোখে সংক্রমিত হলে প্রথম দিকে ‘ডাবল ভিশন’ হবে। দৃষ্টিশক্তির সমস্যা হতে পারে। মস্তিষ্কে সংক্রমণ হলেচাঁদির অংশ কালো হয়ে যেতে পারে। ফুসফুসেও সংক্রমণ হতে পারে। সেটাও বিপজ্জনক হতে পারে।
সংক্রমণ কতটা বিপজ্জনক হতে পারে ?
রাধেশ্যাম মাহাতো: যে অংশে সংক্রমণ ঘটে সেখান থেকে দ্রুত ছড়ায়। ক্যানসার আক্রান্ত কোষ থেকে সংক্রমণ ছড়াতে যে সময় লাগে তা থেকেও দ্রুত সংক্রমণ ঘটে। মুখে চামড়ায় সংক্রমণ ঘটলে চামড়া তুলে ফেলতে হয়।
চিকিৎসা শুরুর আগে সংক্রমণ নিশ্চিত হতে গেলে কী করতে হবে ?
রাধেশ্যাম মাহাতো: লালারস নিয়ে ‘ফাঙ্গাল স্ট্রেন’ পরীক্ষা করে দেখা হয়। সেটা তাড়াতাড়ি করা যায়। আবার সংক্রমিত অংশের চামড়া কেটে বায়োপসি করা হয়। সেটা সময়সাপেক্ষ।
ওষুধ দেওয়া শুরু হয় কখন ?
রাধেশ্যাম মাহাতো: পরীক্ষায় নিশ্চিত হয়ে অ্যাম্পোটেরসিন-বি ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়।