ফেরার গল্প: লকডাউনের জেরে আচমকা আটকে পড়েন পাঁচজন শ্রমিক। কোনও উপায় না পেয়ে নিজেরাই কিনে ফেললেন নতুন সাইকেল। রবিবার তাতে চেপেই গুয়াহাটি থেকে বাড়ির পথে রওনা হলেন এঁরা। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক
ত্রাসের নাম কলকাতা!
রেড জ়োন কলকাতা থেকে কারা ফিরছেন, কী ভাবে ফিরছেন, প্রতিনিয়ত সেই খোঁজ রাখছেন কোচবিহার জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্তারা।
স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, কলকাতা ফেরত প্রত্যেকের লালারস পরীক্ষা করা হবে। তাঁদের রাখা হবে কোয়রান্টিনেও। রবিবার বর্ধমান থেকে বেশ কয়েকটি বাস কোচবিহারে পৌঁছয়। তার কয়েকটি যায় তুফানগঞ্জ ও মাথাভাঙায়। বাসে থাকা প্রত্যেক যাত্রীর শারীরিক পরীক্ষা করা হয়। শারীরিক পরিস্থিতি দেখে কাউকে কোয়রান্টিনে আবার কাউকে হোম কোয়রান্টিনে রাখা হয়েছে। কোচবিহারের জেলাশাসক পবন কাদিয়ান বলেন, “শ্রমিকদের বিষয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
কোচবিহার এখনও পর্যন্ত গ্রিন জ়োনের তকমা ধরে রাখতে পেরেছে। দিল্লি থেকে ফেরা আলিপুরদুয়ারের কোয়রান্টিন সেন্টারে থাকা চার বাসিন্দা করোনা আক্রান্ত হন। তাঁদের মধ্যে দু’জনের বাড়ি আলিপুরদুয়ারে এবং অন্য দু’জন কোচবিহারের জোড়াইয়ের বাসিন্দা। তার বাইরে এখন পর্যন্ত জেলায় করোনা আক্রান্তের খোঁজ নেই।
উত্তরবঙ্গের জেলাগুলি তো বটেই, রাজ্যে কোচবিহারে লালারস পরীক্ষার হারও অন্য জেলার তুলনায় বেশি। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ১৫২৯ জনের লালারস পরীক্ষা হয়েছে জেলায়। সবারই রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। শনিবার একদিনে ৫৯৩ জনের লালারস সংগ্রহ করা হয়। রবিবার তা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এখন পর্য়ন্ত একদিনে দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা ৪৩৫ জনের এবং পুরুলিয়া ৩০৩ জন বাসিন্দার লালারস পরীক্ষার জন্য পাঠাতে পেরেছে বলে জানা গিয়েছে।
এই অবস্থার মধ্যে গ্রিন জ়োনের তকমা ধরে রাখতে মরিয়া কোচবিহার। কিন্তু সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ শুরু হয়েছে রবিবার থেকেই। এতদিন পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু লোকজন ভিন্ রাজ্য বা জেলা থেকে কোচবিহারে আসছিলেন। এখন একসঙ্গে বহু লোকজন ঢুকতে শুরু করেছেন। তাঁদের অনেকেই রেড জ়োন থেকেও আসছেন।
কোচবিহারের বহু মানুষ কর্মসূত্রে কলকাতায় থাকেন। এ ছাড়াও নানা কাজে সেখানে গিয়ে আটকে পড়েছেন অনেকেই। তাঁরাও সেখান থেকে ফেরার চেষ্টা করছেন। এ দিন বর্ধমান থেকে পাঁচটি বাসে তুফানগঞ্জে ১ ব্লকের ১৪৪ জন শ্রমিককে জেলায় ফেরানো হয়। মাথাভাঙারও অনেকে একই ভাবে বাসে মহকুমায় ফেরেন। বিশেষ ট্রেনেও ভিন্ রাজ্যের তিন হাজারের বেশি শ্রমিক ঘরে ফিরছেন। সে কথা চিন্তা করে ইতিমধ্যেই কোয়রান্টিন সেন্টারের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
কোচবিহারের সিএমওএইচ সুমিত গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “সবরকম প্রস্তুতি আমাদের নেওয়া হয়েছে।” এক স্বাস্থ্য কর্তা জানিয়েছেন, কলকাতায় কোচবিহারের প্রচুর মানুষ রয়েছেন। সেই রেড জ়োন থেকে কেউ ফেরা মানেই ঝুঁকি থেকেই যায়। তাই সেখান থেকে ফেরা লোকজনের লালারস পরীক্ষা করানো হবে। প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “এই সময়টাই বড় চ্যালেঞ্জ। সে কথা মাথায় রেখেই যাবতীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’