অসচেতন। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।
প্রসব বেদনায় ছটফট করছিলেন মহিলা। কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজে। ভর্তির সময় তখন জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। প্রশ্ন করা হয়, বাড়ি কোথায়? জবাব, ‘দিনহাটার কাছে।’ আবার প্রশ্ন, ভিনরাজ্য যাননি তো? জবাব, ‘না।’ তড়িঘড়ি তাঁকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে জন্মাল ফুটফুটে সন্তান। রহস্য উদ্ঘাটন হল তার পরে। জানা গেল, মহিলা দিন দুয়েক আগে হরিয়ানা থেকে ফিরেছেন।
হাসপাতালের কর্মী, আধিকারিকেরা এই ঘটনার কথা বলতে বলতে এখনও আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। তাঁদের কথায়, সঙ্গে সঙ্গে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে মেডিক্যাল কলেজে। দ্রুত লালারস পরীক্ষা হয় মহিলার। তার পরে অবশ্য জানা যায়, মহিলার রিপোর্ট নেগেটিভ। স্বস্তি ফিরে আসে মেডিক্যালের কর্মীদের মধ্যে। কিন্তু তাঁদের অভিযোগ, এই ভাবে সত্য গোপন করলে তো বড় বিপদ ঘটতে পারে! রোগীর আত্মীয়দের পাল্টা অভিযোগ, অনেক ক্ষেত্রেই রোগীকে ছুঁয়ে দেখতে চাইছেন না চিকিৎসকরা। তাই এমন তথ্য গোপন। কোচবিহার সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার রাজীব প্রসাদ বলেন, “এমন ঘটনায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে।”
মেডিক্যালের এক আধিকারিক জানান, ওই মহিলার ক্ষেত্রে তাঁর ভিন্ রাজ্য থেকে ফেরার কথা জানা থাকলে চিকিৎসায় আরও সতর্কতা অবলম্বন করতেন সকলে। তা গোপন করাতে মহিলা এবং তাঁর সন্তানের ক্ষেত্রেও ঝুঁকি থেকে যায়। সেখান থেকে করোনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানান, এমন বিষয়ে সাবধানতার জন্য সব সময় সতর্ক থাকা হয়। রোগীদের পরিজনদের একটি অংশের অভিযোগ, বর্তমানে অনেক চিকিৎসকই রোগীদের শরীরে হাত দিতে চান না। নিজস্ব ক্লিনিকে তো চিকিৎসকদের অনেকেই দূরত্ব রেখে রোগীর অসুবিধের কথা জানান। হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতেও রোগীদের শরীরের হাত দিতে চান না অনেকেই।
জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিক অবশ্য বলেন, “এটা ঠিক নয়। প্রয়োজন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।” চিকিৎসকদের একটা বড় অংশের বক্তব্য, চিকিৎসা ঠিক মতো হবে না, এই আশঙ্কা থেকে তথ্য গোপন করা ঠিক নয়। যদি মহিলার দেহে করোনা সংক্রমণ থাকত, তা হলে শুধু তিনিই নন, যে চিকিৎসক তাঁকে প্রথমে দেখেছেন, তাঁর থেকে শুরু করে যিনি অস্ত্রোপচার করেছেন, যে নার্স সেখানে ছিলেন, যে স্বাস্থ্যকর্মী ছিলেন, সকলেই বিপদে পড়তেন। বিপদে পড়ত সদ্যোজাতও।