ছবি: সংগৃহীত।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের নতুন তালিকায় কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং এবং মালদহকে রেড জ়োনে নিয়ে আসার ঘটনায় বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কেন্দ্র ৩০ এপ্রিল এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে। যা দেখার পরে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে বলা হয়েছে, কালিম্পংয়ে ২ এপ্রিল এবং জলপাইগুড়িতে ৪ এপ্রিলের পরে কোনও সংক্রমণের খবর নেই। পাহাড়ে লকডাউন ভাল ভাবেই হচ্ছে বলে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদলও জানিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, তার পরেও কেন জেলা দু’টিকে রেড জ়োনে আনা হল? এর মধ্যে শুক্রবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের চোখ বিভাগে এক চিকিৎসকের শরীরে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তিনি কলকাতার বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার বিশেষ বাসে উত্তরবঙ্গে আসেন। তাঁকে কোভিড হাসপাতালে পাঠানো হয়। ওই বাসে এসেছেন এমন ২৬ জন চিকিৎসক, নার্সকে কোয়রান্টিনে পাঠানো হয়েছে। বাসের চালক, খালাসিকে কোয়রান্টিনে রাখার জন্য প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।
উত্তরবঙ্গে সফররত কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা এবং দিল্লি থেকে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের প্রতিনিধি বলেছেন, শুধু সংক্রমণের সংখ্যা নয়, জনঘনত্ব, লালারস পরীক্ষা ইত্যাদি আরও বেশ কিছু বিষয়ের উপরে ভিত্তি করে জ়োন ভাগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ দিন উত্তরবঙ্গে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি বিনীত জোশী বলেন, ‘‘আমরা আমাদের পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রকে জানাচ্ছি। সরকার সেই মতো বিভিন্ন ‘প্যারামিটার’ দেখে জ়োন ঠিক করছে। বিভিন্ন জ়োনে কী ভাবে চলতে হবে, তা-ও রাজ্যকে জানানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এই গাইডলাইন অক্ষরে অক্ষরে পালন করা উচিত। তা হচ্ছে না।’’
তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, সম্প্রতি উত্তরবঙ্গে যে ক’টি সংক্রমণের ঘটনা জানা গিয়েছে, তার বেশির ভাগ লোকই এসেছেন ভিন্ রাজ্য থেকে। বৃহস্পতিবার রাতে আলিপুরদুয়ারের বারবিশার কোয়রান্টিন সেন্টারে থাকা আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহারের (দু’টি জেলাকেই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক গ্রিন বা সবুজ তালিকায় রেখেছে) মোট যে চার জনের করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে, তাঁরা সম্প্রতি নয়াদিল্লির এমস থেকে এক কিডনি রোগীকে নিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সে করে রাজ্যে ফিরেছেন।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, সংক্রমণ ধরা পড়ার পরে ওই চার জনকে রাতেই শিলিগুড়ির কোভিড হাসপাতালে আনা হয়। তখন জানা যায়, আক্রান্তদের মধ্যে ওই কিডনির রোগীর বাবাও রয়েছেন। মঙ্গলবার তিনি কোয়রান্টিন সেন্টার থেকে ছেলেকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে গিয়েছিলেন। আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসায় আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালের এক শীর্ষকর্তা, জেলা পুলিশের এক শীর্ষকর্তা, বেশ কয়েক জন স্বাস্থ্যকর্মী, অন্তত ১০ জন পুলিশ কর্মীকে কোয়রান্টিনে এবং চিকিৎসকদের হোম কোয়রান্টিনে পাঠানো হয়েছে। উত্তর দিনাজপুরের ডালখোলায় একটি নাকা চেকিং পয়েন্ট দিয়ে দিল্লি-ফেরতদের নিয়ে এই অ্যাম্বুল্যান্সটি রাজ্যে ঢোকে। সেখানকার ১২ জন পুলিশকর্মীকেও কোয়রান্টিনে পাঠানো হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে আলিপুরদুয়ার জেলা অরেঞ্জ জ়োনে ঢোকার কথা। সরকারি নির্দেশ এলেই পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে। এর পাশাপাশি সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী মালদহে করোনা আক্রান্ত এখন পর্যন্ত দু'জন। তিন জনের রিপোর্ট নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি (ইনকনক্লুসিভ)। মালদহ জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভূষণ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কীসের ভিত্তিতে কেন্দ্র মালদহ জেলাকে রেড বা লালস্তরে নিয়ে এল, তা জানা নেই।’’
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষের মতে, সব দিক থেকেই দেখা যাচ্ছে, ভিন্ রাজ্যে থেকে লোক আসায় বিপদ বাড়ছে। পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, ‘‘কালিম্পঙের পরিস্থিতি ভাল। তার পরেও কেন এভাবে রেড জ়োন করা হচ্ছে সেটা পরিষ্কার নয়।’’ অন্য দিকে, বিজেপির তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সর্বভারতীয় দায়িত্বে থাকা অমিত মালব্য আলিপুরদুয়ারকে কেন রাজ্য এখনও গ্রিন জ়োনে রেখেছে, তাই নিয়ে কটাক্ষ করেছেন। তবে তিনি কালিম্পং বা জলপাইগুড়ি নিয়ে কিছু বলেননি।