মাস্ক ছাড়াই মালদহের পথে। নিজস্ব চিত্র।
করোনার প্রথম ঢেউয়ে এক বছরে ৮০ হাজারের মতো বাসিন্দা আক্রান্ত হয়েছেন উত্তরবঙ্গে। আর দ্বিতীয় ঢেউয়ে গত সাড়ে তিন মাসে আক্রান্ত লক্ষাধিক। স্বাভাবতই স্পষ্ট দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতা এতটাই দ্রুত। তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কার মধ্যে, ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুরুতে দূরত্ব বিধির উপর জোর দেওয়া হয়েছে। কারণ, স্পর্শ থেকে ওই ভাইরাস শরীরে আসা এবং পরে কোনও ভাবে শ্বাসের সঙ্গে শরীরে ঢুকে সংক্রমণ ঘটাচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। পরে ‘ড্রপলেট’-এর মাধ্যমে ভাইরাস ছড়িয়ে সংক্রমণ ঘটছে দেখে তা রুখতে দূরত্ব বিধির পাশাপাশি মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতা মূলক করা হয়। দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানিয়েছেন ‘মাইক্রো ড্রপলেট’ বাতাসে ভেসে তার মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমণ ছড়াতে পারে। এবং সে কারণে মাস্কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক বলে তাঁরা জানায়। এমন কী, অনেক ক্ষেত্রে বাড়িতে বা কর্মস্থলে মাস্ক পরে থাকার পরামর্শও দিয়েছেন।
এখন প্রশ্ন, তৃতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ ছড়ানোর এই প্রবণতা বাড়তেও পারে। সে কারণে মাস্ক পরাটা কতটা জরুরি সে বিষয়ে সচেতন হওয়ার উপর জোর দিয়েছেন স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা। জন স্বাস্থ্য দফতরের উত্তরবঙ্গের ওএসডি সুশান্ত রায় বলেন, ‘‘দ্বিতীয় ঢেউয়ে যে গতিতে সংক্রমণ বেড়েছে সেটা উদ্বেগের। তার উপর নির্বাচনকে সামনে রেখে যে ভাবে মানুষ জমায়েত করেছে, মাস্ক ছাড়া ঘুরেছে সেটা সংক্রমণের গতি বাড়াতে সহায়তা করেছে। তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই মাস্ক এবং দূরত্ব বিধি মানা খুবই জরুরি।’’ স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, গত বছর মার্চ মাস থেকে এ বছর মার্চ মাস পর্যন্ত ৭৯,৬৩৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন উত্তরবঙ্গে। গত এপ্রিল থেকে দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তে শুরু করে। মে মাসে সংক্রমণ চরমে ওঠে। গত বুধবার পর্যন্ত দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় উত্তরবঙ্গে সংক্রমণ দু’লক্ষ ছুঁতে চলেছে। সংক্রমণ ১,৯৯,১৮৪।
বিশেষজ্ঞদের মতে বাজারে, অনেকের মধ্যে যথেচ্ছ ভাবে মাস্ক ছাড়া ঘোরাফেরা বিপজ্জনক। টিকাকরণ চললেও তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কার মুখে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মাস্কের কোনও বিকল্প নেই বলেই দাবি। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কল্যাণ খানের মতে, মনে রাখতে হবে টিকার পরেও অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই টিকা নেওয়া হয়েছে তাই বিধি নিষেধ না মেনে মাস্ক ছাড়া ঘুরব এমন প্রবণতা থাকলে সেটা খুবই বিপজ্জনক হবে। টিকা নিলেও ভাইরাসের মিউটেশনের ফলে কোনও নতুন স্ট্রেন সক্রিয় হয়ে উটচে কি না সেটাও বোঝার উপায় নেই। এসব অনিশ্চয়তার মধ্যে নিরাপত্তা দেবে মাস্ক-ই।’’