—ফাইল চিত্র।
করোনা সংক্রমণ রুখতে যত বেশি পরিমাণ নমুনা-পরীক্ষা করা সম্ভব, ততই ভাল— বলছেন অনেক বিশেষজ্ঞই। কিন্তু উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে কি সেই মতো পর্যাপ্ত কিট রয়েছে? জবাব খুঁজতে গিয়ে স্বাস্থ্য দফতর এবং উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজির ল্যাবরেটরিতে দেড়শো-দু’শো কিট মিলছে। তা দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি বা কোয়রান্টিনে থাকা সন্দেহভাজনদেরই জরুরি ভিত্তিতে পরীক্ষা করতে হচ্ছে। তাঁদের বক্তব্য, সার্বিকভাবে এলাকা ধরে বাসিন্দাদের সোয়াব বা লালারস পরীক্ষা করে দেখার জন্য পর্যাপ্ত কিটও নেই। রয়েছে উপযুক্ত যন্ত্রের অভাবও। অথচ শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, কালিম্পঙে বেশ কিছু এমন এলাকা রয়েছে, যেখানে একাধিক জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ায় এলাকা ধরে পরীক্ষা জরুরি বলেই মনে করছেন চিকিৎসকদের একাংশ।
যেমন, করোনায় আক্রান্ত হয়ে কালিম্পঙের বাসিন্দা এক মহিলা উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে মারা গিয়েছেন। তাঁর চিকিৎসা পরিষেবায় যুক্ত দুই নার্স ইতিমধ্যেই সংক্রমিত হয়েছেন। এক নার্সের স্বামী এবং আত্মীয়াও আক্রান্ত। মেডিক্যাল কলেজ লাগোয়া যে আবাসনে তাঁরা থাকেন, সেটিকে ‘ক্লাস্টার’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। নিয়ম মাফিক সেখানকার বাসিন্দাদের সকলের পরীক্ষা করার কথা। অথচ প্রয়োজনীয় কিট, যন্ত্রাংশের অভাবে সেই কাজ করার ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে। চিন থেকে যে কিট হয়েছে, তার কিছু মিলবে কিনা, সে দিকেও তাকিয়ে উত্তরবঙ্গ।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের সমস্ত চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, কোভিড স্ক্রিনিং সেন্টারের জুনিয়র চিকিৎসকদের নমুনা পরীক্ষা করা দরকার, বলছেন ডাক্তাররাই। সেখানেও কিট কম বলেই অভিযোগ। করোনার মোকাবিলা উত্তরবঙ্গে সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা গোপালকৃষ্ণ ঢালি বলেন, ‘‘ঢালাও নমুনা পরীক্ষার মতো কিট এখনও আসেনি। সন্দেহভাজন যারাই আসছে, একটি কমিটি তাদের খতিয়ে দেখে ঠিক করছে, কাদের পরীক্ষা করাতে হবে। ‘র্যান্ডম’ পরীক্ষা করা হচ্ছে না।’’ তিনি জানান, যে এলাকা ক্লাস্টার বা মাইক্রোপ্ল্যানের মধ্যে রয়েছে, সেখানেও ‘রেকমেন্ডেশন’ থাকলেই পরীক্ষা করা হচ্ছে। কিট মিললেও যে মেশিন রয়েছে, সেটি ‘অটোমেটিক’ নয়। তাতে বড় জোড় দেড়শো-দুশো পরীক্ষা একযোগে করা যায়। স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র থাকলে তবেই সংখ্যাটা বাড়ে।
কালিম্পংয়ের মহিলা তো বটেই, শিলিগুড়ির ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা এক রেলকর্মীর মৃত্যুর পরেও করোনা সংক্রমণের বিষয়টি সামনে এসেছিল বলে দাবি সংশ্লিষ্ট পরিবারের। তাঁদের দাবি, মৃতদেহও পরিবারকে দেওয়া হয়নি। ওই কলোনিতেও ব্যাপক হারে নমুনা পরীক্ষার দাবি উঠেছে। মৃত মহিলার জ্যোতিনগর ও কালিম্পংয়ের ওমদেন রোডে বাড়ির এলাকায় বাসিন্দাদের ঢালাও নমুনা পরীক্ষা দরকার বলে বিশেষজ্ঞদের একাংশের মত। তাঁর সংস্পর্শে এসে পরিবারের ১১ জন আক্রান্ত হন। তার মধ্যে চার জন শিলিগুড়ির জ্যোতিনগরের বাড়িতে থাকতেন। চেন্নাই থেকে ফিরে মহিলা চিকিৎসার জন্য নানা জায়গায় গিয়েছেন। কালিম্পংয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন। তাঁর সংস্পর্শে আসা ১০০ জনকে কোয়রান্টিন করা হয়েছে। তাঁদের অধিকাংশ ছাড়াও পেয়েছেন।