প্রতীকী ছবি
জরুরি ভিত্তিতে নমুনা পরীক্ষায় গতি আনতে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের টিবি (যক্ষ্মা) রোগীর নমুনা পরীক্ষার ল্যাবরেটরিকেও করোনা পরীক্ষার কাজে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, টিবি রোগের নমুনা পরীক্ষার ল্যাবরেটরি উন্নতমানের পরিকাঠামো যুক্ত তথা স্টেজ-৩ স্তরের হয়। সেখানে করোনা পরীক্ষার স্টেজ-২ স্তরের ল্যাবরেটরি হলেই চলে। তাই সেখানে পরীক্ষা ব্যবস্থা করতে কোনও সমস্যা নেই। সেখানে ‘মাইক্রো চিপ বেসড রিয়্যাল টাইম পিসিআর’ যন্ত্রে জরুরি ভিত্তিতে সে সব নমুনা দেড় দুই ঘণ্টায় পরীক্ষা করা সম্ভব হবে। বিশেষ করে সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন (সারি) কেন্দ্রে যে সব রোগী আসছেন, তাঁদের নমুনা দ্রুত পরীক্ষা করা সম্ভব এই পদ্ধতিতে।
জেলাগুলির সারি হাসপাতালে ভর্তি করোনা সন্দেহভাজন রোগীদের পরীক্ষা রিপোর্ট হতে এই মুহূর্তে কমপক্ষে লেগে যাচ্ছে দেড় থেকে দু’দিন। তাতে সমস্যা বেড়েছে বলেই বারবার অভিযোগ উঠেছে। স্বাস্থ্য আধিকারিকদের একাংশ জানান, সারিতে সন্দেহভাজনদের রিপোর্ট অধিকাংশের নেগেটিভ হচ্ছে। তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু রিপোর্ট পেতে দেরি হওয়ায় সারি হাসপাতালে রোগীর ভিড় বাড়ছে, তাতে ঝুঁকিও বাড়ছে। ভর্তির কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নমুনা পরীক্ষা করা গেলে, সেই সমস্যা থাকত না— বলছেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের লোকেরাই। তাঁদের বক্তব্য, নেগেটিভ এলে সে ক্ষেত্রে কয়েক ঘণ্টা পরে প্রয়োজন বুঝে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া যেত। সন্দেহভাজন রোগী এবং তাদের পরিবারও নিশ্চিত হয়ে অন্যত্র প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করিয়ে নিতে পারতেন। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ভাইরোলজির ল্যাবরেটরিতে বর্তমান ব্যবস্থায় তা সম্ভব হচ্ছে না। তাই জরুরি প্রয়োজনের নমুনাগুলো চটজলদি পরীক্ষার জন্য উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের টিবি’র নমুনা পরীক্ষার ল্যাবরেটরিতে আলাদা ব্যবস্থা হচ্ছে।
করোনা মোকাবিলায় উত্তরবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ আধিকারিক সুশান্ত রায় বলেন, ‘‘ওই ব্যবস্থার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই সেই ব্যবস্থা চালু করা যাবে বলে আশাবাদী।’’
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল সূত্রে জানা গিয়েছে, টিবি ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান, কর্মী মিলিয়ে ৯ জন আছেন। তাঁদের একজন করোনা পরীক্ষার কাজ করবেন। তবে কর্মীদের অনেকে তা করতে চাইছেন না বলে একটি সূত্রে জানা গিয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, সে ক্ষেত্রে কড়া ব্যবস্থা নিতে পারেন কর্তৃপক্ষ।
শুধুমাত্র দ্রুত নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা না-থাকায় শনিবার কাওয়াখালির সারি হাসপাতালে ৩৪ জন রোগী হয়ে যায়। এ দিন যেমন দুপুরে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে সন্দেহভাজন অন্তত ১০ জনকে কাওয়াখালিতে থাকা সারি হাসপাতালে পাঠানো হয়। আগের কিছু রোগীও সেখানে ভর্তি আছেন, যাঁদের রিপোর্ট বিকেল পর্যন্ত মেলেনি। পরে সন্ধ্যায় শুক্রবার ভর্তি হওয়া ৬ জনের রিপোর্ট মেলে। তাঁদের রিপোর্ট নেগেটিভ। প্রতিদিন বেলা ১টার আগে লালারস নেওয়া হয়। এর পর যাঁরা ভর্তি হয়েছেন, তাঁদের লালারস সংগ্রহ করা হবে পরদিন। সেই দিন অনেক রাতে রিপোর্ট আসবে। সে ক্ষেত্রে রিপোর্ট নেগেটিভ এলেও কমপক্ষে দুই দিন সারি হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হচ্ছে। আর যদি রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে, সে ক্ষেত্রেও রোগীকে কোভিড হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা চালু হতে দেরি হয়ে যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট মহলের একটি অংশের বক্তব্য, সারিতে রোগীর চাপ বেড়েছে জেনে পরিস্থিতি সামলাতে এ দিনই প্রথম সন্ধ্যায় ফের লালারস সংগ্রহের ব্যবস্থা করতে হয়েছে।