Coronavirus in North Bengal

কোয়রান্টিন, নমুনা পরীক্ষায় এখনও পিছিয়ে

লকডাউনের ৬০ দিন কেটে গেল। জীবন প্রায় স্তব্ধ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে এখন একটু করে খুলছে দোর, তেমনই নজর দেওয়া হচ্ছে জরুরি পরিষেবায়। আজ স্বাস্থ্য পরিকাঠামো।আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং থেকে করোনা সন্দেহভাজনদের অনেক ক্ষেত্রেই আনতে হচ্ছে শিলিগুড়িতে।

Advertisement

সৌমিত্র কুণ্ডু

শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০২০ ০৫:০৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

বিপদ কিন্তু এখনও কাটেনি।

Advertisement

কালিয়াগঞ্জের কোয়রান্টিন সেন্টারে জায়গা না-থাকায় সেখানকার কিছু পরিযায়ী শ্রমিককে চোপড়ার কোয়রান্টিন সেন্টারে পাঠাতে হয়। তাঁদের লালা সংগ্রহ হলেও রিপোর্ট আসার আগেই তাঁরা বাড়ি চলে যান। রিপোর্ট এলে দেখা গেল অনেকেই ‘পজ়িটিভ’। ব্যস, শুরু হয়ে গেল দৌড়ঝাঁপ। মালদহের লক্ষ্মীপুরে কোয়রান্টিন সেন্টারে জায়গার অভাবে শ্রমিকের ত্রিপল টাঙিয়ে থাকছেন। অভিযোগ উঠেছে, পরিযায়ী শ্রমিকদের বেশিরভাগেরই লালারস পরীক্ষা হচ্ছে না। আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং থেকে করোনা সন্দেহভাজনদের অনেক ক্ষেত্রেই আনতে হচ্ছে শিলিগুড়িতে।

এই খণ্ডচিত্রগুলিই বলে দিচ্ছে, করোনা মোকাবিলায় উত্তরবঙ্গ জুড়ে বাড়াতে হবে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো। কারণ, এই পরিকাঠামোর ঘাটতি বিপদের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে, বলছেন চিকিৎসাবিভাগের সঙ্গে জড়িত লোকজনেরাই।

Advertisement

শুরুতে করোনা সংক্রমণ রয়েছে কি না, জানতে সন্দেহভাজনদের লালারস নাইসেডে পাঠিয়ে পরীক্ষা করানো ছাড়া গতি ছিল না। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ভাইরোলজির ল্যাবরেটরি থাকলেও সেখানে পরীক্ষার অনুমোদন ছিল না। ২৯ মার্চ থেকে সেখানে পরীক্ষা শুরু হয়। পরীক্ষা শুরুহয় মালদহ মেডিক্যাল, ফালাকাটা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালেও। দু’মাসে উত্তরবঙ্গে নমুনা পরীক্ষার পরিমাণও পাল্লা দিয়ে বেড়েছে, শুরুতে দিনে ১০-২০টি থেকে এখন দিনে হাজার-দু’হাজার। দেখা যাচ্ছে, তা-ও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। রায়গঞ্জ, জলপাইগুড়ি এবং ভবিষ্যতে পাহাড়ে পরীক্ষা ব্যবস্থা চালুর কথা ভেবেছে স্বাস্থ্য দফতর।

ভিন্ রাজ্য থেকে লক্ষাধিক পরিযায়ী ফিরছেন উত্তরবঙ্গে। তাঁদের কোয়রান্টিনে রাখা, ব্যাপক হারে লালা পরীক্ষা জরুরি। অভিযোগ, পরিকাঠামো অভাবে সেই কাজ ঠিক মতো হচ্ছে না। সরকারি কোয়রান্টিন ব্যবস্থার অভাবে হোম কোয়রান্টিনে থাকছে। গরিব মানুষরা অনেকেই নৌকা, গাছ, স্কুল ভবনের তালা ভেঙে নিজেদের আলাদা করে রাখার ব্যবস্থা করছেন। যেখানে তা হচ্ছে না, আশঙ্কা বাড়ছে।

উত্তরবঙ্গের করোনা মোকাবিলার দায়িত্বে থাকা আধিকারিক সুশান্ত রায় অবশ্য বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গের দিকে সরকারের নজর রয়েছে। পরিকাঠামো বাড়ানো হচ্ছে। পরীক্ষার সংখ্যা বেড়েছে, আরও বাড়ানো হবে। কোয়রান্টিন ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনকে সক্রিয় হতে বলা হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, কেন্দ্রের তরফে র্যাপিড কিট সরবরাহ না হওয়ায় দু’টো অটোমেটেড রিয়্যাল টাইম পিসিআর যন্ত্র এনে রোজ পরীক্ষার সংখ্যা বাড়িয়ে পাঁচ হাজারে নেওয়াই মূল লক্ষ। সেই যন্ত্র এখনও পৌঁছয়নি।

স্বাস্থ্য দফতর জানাচ্ছে, পাশাপাশি বেড়েছে কোভিড আক্রান্তদের জন্য আলাদা হাসপাতালের ব্যবস্থাও। দফতরের এক সূত্র জানাচ্ছে, করোনার গোড়ায় ছিল শুধু উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের ৮টি শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ড। এখন সেখানে আট জেলা মিলিয়ে একাধিক সারি এবং কোভিড হাসপাতাল তৈরি হয়েছে। পাল্টা যুক্তিতে অবশ্য বলা হয়েছে, বহু জেলায় এখনও কোভিড হাসপাতাল নেই। মালদহে আক্রান্তের সংখ্যা যে ভাবে বাড়ছে, তাতে বাধ্য হয়ে কোভিড হাসপাতালের চত্বরে থাকা সারি কেন্দ্রটিকেও কোভিডে বদলে ফেলতে হয়েছে।

দফতরের কথায়, যত দ্রুত বাকি পরিকাঠামোগত বন্দোবস্তগুলি হয়ে যায়, ততই ভাল। পরিযায়ীদের ঘরে ফেরার মধ্যে ততই করোনা প্রভাব ঠেকানো সহজ হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement