করোনার জেরে নজরদারি
এখান দিয়ে ট্রাক চলাচল কয়েকদিনের মধ্যে বন্ধই না হয়ে যায়। বিড়বিড় করে পানের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে শঙ্কিত গলায় বলছিলেন এক চালক।
কিছুক্ষণ আগেই অসম থেকে ট্রাক নিয়ে ফিরেছেন শিলিগুড়ির বাসিন্দা এই চালক। বাংলার সীমানায় বারবিশার কাছে এই পাকরিগুড়িতে এসে আটকে গেলেন। করোনাভাইরাসের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে এখানে শনিবার থেকে শুরু হয়েছে বিশেষ স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির। অসম থেকে যাঁরাই আসছেন, তাঁদের পরীক্ষা হচ্ছে। রবিবার সকালে এই চালক একটা পান মুখে পুরে পরম স্বস্তির সঙ্গে জানালেন, তিনি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। এ কথা তিনি যখন বলছেন, ঠিক তার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই জানা গেল, অসম থেকে আসা এক ট্রাকচালক ও তাঁর সঙ্গীর স্বাস্থ্য পরীক্ষায় তাঁদের শরীরে জ্বর, সর্দি-কাশি এবং বেশ কিছু উপসর্গ ধরা পড়েছে। এই প্রতিবেদক শিবিরের কাছে গিয়ে ছবি তোলার চেষ্টা করতে গেলে কর্তব্যরত কর্মী-অফিসাররা বাধা দেন। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই জানা গেল, ওই দু’জনকেই ফালাকাটা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে পাঠানোর বন্দোবস্ত হচ্ছে। এরপর শত চেষ্টা করেও ওই চালক ও তাঁর খালাসির কাছ পর্যন্ত পৌঁছনো সম্ভব হয়নি। স্বাস্থ্য শিবিরের দায়িত্বে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার সময় ওই দু’জনের শরীরে জ্বর, সর্দি-কাশির উপসর্গ মেলে। এরপর তাঁদের স্বাস্থ্য দফতর নিজেদের হেফাজতে নেয়। তাঁদের হাসপাতালে যেতে বলা হয়। কিন্তু রাজি না হওয়ায় তাঁদের অসমে ফিরে যেতে বলা হয়। পরে তাঁরা হাসপাতালে যেতে রাজি হন। কিছুক্ষণের মধ্যেই অ্যাম্বুল্যান্সে ফালাকাটা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ওঁদের। দু’জনেই আলিপুরদুয়ার জেলার বাসিন্দা।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, ওই দু’জনকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়েছে। তাঁদের রক্তের নমুনা পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। তাঁরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কিনা সে-ব্যাপারে প্রথমে স্পষ্ট করে জানাননি জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। পরে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক পুরণ শর্মা বলেন, ‘‘দু’জনের কিছু উপসর্গ দেখে পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে। চিকিৎসা চলছে। যদি আগামিকাল পর্যন্ত একই উপসর্গ থাকে, তাঁদের দেহরসের নমুনা পরীক্ষাগারে পাঠানো হবে।’’
আলিপুরদুয়ার জেলার ভুটান সীমান্তে আগেই পরীক্ষা শুরু করেছিল স্বাস্থ্য দফতর। এবার অসম সীমানায় শিবির করে পরীক্ষা শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্য কর্তারা জানান, অসম হয়েও ভুটানের বহু মানুষ নানা কাজে প্রতিদিন এ রাজ্যে আসেন। তাঁদের পরীক্ষা করা হচ্ছে। যাতে ভিন রাজ্য বা ভুটান থেকে আক্রান্ত কেউ এ রাজ্যে আসতে না পারেন, তার জন্য প্রত্যেকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে।