পাপিয়া চক্রবর্তী কোচবিহারের গৃহবধূ
‘লকডাউন’ শব্দটি আমার কাছে খুব একটা পরিচিত নয়। এমন একটা সঙ্কট সময়ের মুখোমুখি এর আগে আমি কখনও হইনি। সত্যি বলতে কী, শুধু আমি কেন, আমাদের প্রজন্মের কারও এই অভিজ্ঞতা হয়নি। তাই লকডাউনের তাৎপর্য বোঝার হয়তো প্রয়োজনও হয়নি।
লকডাউন ঘোষণার পরে চারদিকে এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা রাজত্ব করতে শুরু করেছে যেন। কেমন একটা অস্বস্তি হচ্ছে। তবু মনকে বোঝাই, এই সময় এমনটাই প্রয়োজন। আমাদের এই সমাজকে মহামারীর হাত থেকে বাঁচাতে এমন সিদ্ধান্তই সঠিক। যেহেতু এই ভাইরাস এক ব্যক্তি থেকে আর এক ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করছে। তাই আমরা ঘরবন্দি হয়ে থাকছি। এটাই সবচেয়ে জরুরি। এখন ঘরই আমাদের কাছে সব। অবশ্য আমি বা আমাদের মতো যাঁরা চাকরি করি না, তাঁরা নতুন করে ঘরবন্দি নই। আসলে আমাদের তো রোজই ঘরবন্দিই থাকতে হয়। সকালে উঠেই রান্নার আয়োজন করা। তার পরেই সবাই মিলে খাওয়দাওয়ার আয়োজন। বাড়ির কাজ চলতেই থাকে দিনভর। সেই সব ছেড়ে যখন একটু সময় হয়, তখন হয়তো অন্য কাজে বসি। একটু ম্যাগাজিন বা বইয়ের পাতায় চোখ রাখা, কখনও মোবাইল বা টেলিভিশনের সামনে একটু জিরিয়ে নেওয়া। সেই সবও রুটিন একইরকম আছে। মাঝেমধ্যে কেনাকটার জন্য বা বিশেষ কোনও প্রয়োজনে বাইরে তো যেতেই হয়। এখন সেখানেই একটা বাধা তৈরি হয়েছে। এখন আর একদমই বেরোচ্ছি না। ঘরে বসে টেলিভিশনেই যা দেখতে পাচ্ছি, তাতে ধরেই নেওয়াব যায়, এখন শিক্ষকবা পড়ুয়াদের স্কুল যাওয়ার তাড়া নেই। ব্যবসায়ীদের দোকান খোলার তাড়া নেই। চারপাশটা ফাঁকা। আমি বাড়িতে বসেই তার কিছুটা আঁচ করতে পারছি।
আমার স্বামী অজয় চক্রবর্তী ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। খুব প্রয়োজন ছাড়া তিনিও বাইরে বেরোচ্ছেন না। বাড়িতেই থাকছেন। আমার ছেলে অনুষ্টুপ ইংরেজি মাধ্যমের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। পরীক্ষা শেষ হয়েছে। রেজাল্ট এখনও বেরোয়নি। এই অবস্থায় পড়াশোনার জন্য বাইরে যাওয়ার কোনও সুযোগ নেই। অনেকদিন পর আমরা সবাই একসঙ্গে অনেকক্ষণ সময় কাটাতে পারছি। এটা আমাদের কাছে একটা বড় পাওনা। কিন্তু এই সঙ্কট পরিস্থিতিতে ওই পাওনা খুব স্বস্তির সঙ্গে উপভোগ করতে পারছি না। কারণ, একটা আতঙ্ক যেন তাড়া করে বেড়াচ্ছে সবসময়। কেউ একজন বাড়ির বাইরে গেলেই চিন্তায় বসে থাকি, কতক্ষণে বাড়ি ফিরবে। ভগবানের কাছে প্রার্থনা করি, যাতে ১৫ এপ্রিলের মধ্যে আমরা এই সমস্যা থেকে মুক্ত হই।