ফাইল চিত্র
এক বিছানায় ঘুমোতে হয় তিনজনকে। ঘুমের মধ্যে একজন পা ছুঁড়লে, অন্যজন গড়িয়ে পড়ে খাট থেকে। পড়াশোনা করার সময়েও ছোট ঘরে একসঙ্গে বসে চল্লিশ জন। যে ঘরগুলিতে কোনওরকমে পঞ্চাশ জন থাকতে পারে সেখানে ঠাসাঠাসি করে রাখা হয়েছে ১৫৬ জন শিশু-কিশোরকে। যখন রাজ্যেও করোনা সংক্রমণ নিয়ে ভয় রয়েছে। সেখানে এমন ব্যবস্থায় প্রশ্ন উঠছে। জলপাইগুড়ির সরকারি হোম কোরকে ঘর বাড়ন্ত, এ দিকে প্রতিদিনই নতুন নতুন আবাসিক এসেই চলছে। করোনা সংক্রমণ নিয়ে আতঙ্ক ছড়াতে শুরু করায়, কোরক নিয়ে কী পদক্ষেপ করা হবে তা নিয়ে চিন্তায় জেলা প্রশাসন।
একসঙ্গে যাতে বেশি ছেলেমেয়ে কাছাকাছি থাকতে না পারে তাই রাজ্য জুড়ে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে। একসঙ্গে পঞ্চাশ জন জড়ো না হতে, আবেদন জানানো হয়েছে। কিন্তু অনাথ, ভবঘুরে এবং আইনি মামলায় জড়িত শিশু-কিশোরদের সরকারি হোম কোরকে গাদাগাদি করেই থাকতে হচ্ছে। ভিনরাজ্য থেকে উদ্ধার হওয়া বা প্রতিবেশী দেশগুলি থেকেও এ দেশে অবৈধ ভাবে ঢুকে পড়া শিশু-কিশোরদের এই হোমে নিয়ে আসা হয়। এমন হোমগুলিতে সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি থাকে বলে চিকিৎসকদের দাবি।
জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের এক চিকিৎসকের কথায়, “একসঙ্গে ঠাসাঠাসি করে থাকলে সংক্রমণের আশঙ্কা প্রবলভাবে বেড়ে যায়। প্রশাসনের উচিত এখনই কোনও বিকল্প ব্যবস্থা করা।” কোরকের এমন অবস্থা অবশ্য একদিনের নয়। পরিকাঠামোর অভাব দীর্ঘ দিন ধরেই। পিলখানা এলাকার এই হোমে নতুন ভবন তৈরির কাজও চলছে। যদিও তা এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। ওই কাজ শেষ হতে দেরি রয়েছে বলে সূত্রের খবর। ততদিন পর্যন্ত ঠাসাঠাসি এড়াতে কী পদক্ষেপ?
জলপাইগুড়ির জেলাশাসক অভিষেক তিওয়ারি বলেন, “হোম কোনওভাবেই বন্ধ করা যাবে না। তবে কোরকের সুপারকে বলেছি, যাতে হোম পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা হয়। শৌচাগার পরিষ্কার থাকে। সংক্রমণ ঠেকানোর যা যা সামগ্রী রয়েছে, সব হোমে সরবরাহ করার ব্যবস্থা হচ্ছে।”
সোমবার দুপুরে হোমের আবাসিকদের করোনা সংক্রমণ নিয়ে বোঝানো হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। আবাসিকদের সকলেরই বয়স ১৮-এর নীচে। বেশিরভাগ আবাসিকেরই বাড়ির ঠিকানা নেই। অভিভাবকহীন এই শিশু-কিশোরদের সরকারি হোম ছাড়া অন্য কোথাও থাকার জায়গাও নেই। এদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে প্রশাসনকে যথেষ্ট সহর্মমিতা দেখাতে হবে বলে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির দাবি। ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে আজ, মঙ্গলবার থেকে পরিদর্শন হতে পারে বলে খবর।