ফাইল চিত্র
করোনা নিয়ে উদ্বেগের মধ্যেও জখম ষাঁড়কে সুস্থ করে তুলতে এতটুকু খামতি রাখতে চাইছেন না ওঁরা। কেউ ছুটে গিয়ে ক্ষতস্থানে মলম লাগালেন। কেউ আবার মাস্ক মুখে দিয়েও ষাঁড়টির ক্ষতস্থানে সংক্রমণ আশঙ্কা এড়াতে ইঞ্জেকশন দিতে সাহায্য করলেন। ওই যুবকদের নাম অধিরাজ আইচ, রানা দে, প্রণব পাল ও সমাবেশ বিশ্বাস। সমাবেশের বাড়ি বাণেশ্বর এলাকায়। বাকিরা সবাই কোচবিহার শহরের বাসিন্দা। সকলেই স্থানীয় পশুপ্রেমী সংগঠনের সদস্য। ‘চারমূর্তি’র এমন পশুপ্রেম কাহিনি এলাকার বাসিন্দাদেরঅনেকের নজর কাড়ছে।
ওই সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার বাণেশ্বরের এক যুবক যন্ত্রণাকাতর ‘দাবিদারহীন’ ষাঁড়টিকে দেখে সংস্থার স্থানীয় সদস্যকে জানান। তার পরেই জখম ষাঁড়ের ছবি সংগ্রহ করে একজন প্রাণী চিকিৎসককে পাঠানোর তোড়জোড় শুরু হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া হয়। তিনি মলম, ব্যথার ইঞ্জেকশন, অ্যান্টিবায়োটিকের ‘প্রেসক্রিপশন’ দেন। তা মেনেই শুরু হয় চিকিৎসা। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বাণেশ্বরে পূর্বপাড়া এলাকায় গিয়ে অন্য সদস্যদের সহযোগিতা নিয়ে ষাঁড়ের শরীরে ইঞ্জেকশন দেন অধিরাজ। যিনি ওই সংগঠনের সভাপতি।
অধিরাজ বলেন, “ ষাঁড়ের শরীরে ইঞ্জেকশন করাটা সংগঠনের কাজের স্বার্থেই আগে শিখে নিয়েছিলাম। সেটাই কাজে লাগল। ষাঁড়টির যৌনাঙ্গে ধারালো কিছুর আঘাতে ক্ষত হয়েছে। তাতে প্রাণীটির যন্ত্রণা দেখেই স্থানীয় এক যুবক সমাবেশের মাধ্যমে আমাদের বিষয়টি জানায়। খোঁজখবর নিয়ে চিকিৎসকের তখন আর ঘরে বসে থাকতে পারিনি। করোনা নিয়ে সতর্কতা মনে ছিল বলেই মাস্কমুখে, বাইক চালিয়েই চার জন গিয়েছিলাম।” তিনি জানিয়েছেন, ক্ষত শুকোতে এক, দেড় সপ্তাহ লাগবে। রোজ
চিকিৎসা চলবে।
কী করে জখম হল ষাঁড়টি? কোথায় থেকেই বা এলাকায় এসেছিল? স্থানীয়দের একাংশের অনুমান, অনেকে ষাঁড় ‘ছেড়ে’ দেন। সে রকম ‘দাবিদারহীন’ ওই ষাঁড়টি। এলাকার কিছু চাষের জমিতে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছে। ওই বেড়ায় কোনও ভাবে আঘাত পেয়ে জখম হয়েছে বলেই প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে। তবে অন্য কোন কারণ রয়েছে কিনা তাও দেখা দরকার। বাণেশ্বরের বাসিন্দা সমাবেশ বলেন, “চারজন মিলিয়েই গিয়েছিলাম। সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত রোজই দেখব। ও রকম অবলা প্রাণীদের জন্য চিকিৎসা, পরিচর্যা আমাদের নেশা। তবে সতর্কতা নিয়েই বের হচ্ছি।”
কোচবিহার জেলা পরিষদের সদস্য পরিমল বর্মণ বলেন, “যাঁরা এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছেন তাঁদের ধন্যবাদ। ওঁরা চাইলে সব রকম সহযোগিতা করা হবে।”