ফাইল চিত্র
হাতের আলতো টানে তুলে নিতে হয় দু’টি পাতা। ছেড়ার পরে বেশিক্ষণ রোদে রাখার নিয়ম নেই, তাতে পাতা মিইয়ে যায়। এমন যত্ন পেলেই শীতের পরে ‘ফার্স্ট ফ্লাশে’র চা পাতার স্বাদ-গন্ধ অটুট থাকে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের ধাক্কায় এ বছর ‘ফার্স্ট ফ্লাশ’ উৎপাদনও সংশয়ের মুখে পড়ল।
চিন, জাপান, ইরানে করোনাভাইরাস সংক্রমণের জেরে চায়ের রফতানির উপরে কালো মেঘ ঘনিয়েছে। এ বার রাজ্যে সংক্রমণের খবর ছড়াতে থাকায় চা শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়েও প্রশ্ন উঠল। ইতিমধ্যে রাজ্যের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে ছুটি ঘোষণা হয়েছে। পিছিয়ে যাচ্ছে পুরভোটও। সোমবারই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক করে চা বাগান মালিকদের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন, চা শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পদক্ষেপ করতে। সিনেমা হলের কর্মীদের ক্ষেত্রেও একই অনুরোধ করেছেন তিনি।
চা শিল্পের তরফে জানানো হয়েছে, আজ মঙ্গলবার অথবা বুধবার থেকে কিছু বাগানে শ্রমিকদের মাস্ক বিলি করা হবে। কিন্তু সমস্যা তৈরি হয়েছে বিপুল সংখ্যক এন ৯৫ মাস্কের সরবরাহ নিয়ে। ডুয়ার্স-তরাইয়ের বড় চা বাগান যেগুলিকে ‘সেট গার্ডেন’ বলা হয় সেটির প্রতিটিতে খুব কম করে ধরলেও ৪০০ শ্রমিক কাজ করেন। সকালে সাইরেন বাজার সঙ্গে সঙ্গে যে যাঁর মতো পাতা তুলতে বাগানে চলে যান। পরে সকলকে একসঙ্গে পাতার বস্তা কাঁধে নিয়ে লাইনে দাঁড়াতে হয়। পাতা তোলা চলতে থাকলে এই জমায়েত এড়ানো সম্ভব নয় বলে চা মালিকদের একাংশের দাবি। প্রশ্ন তৈরি হয়েছে, জমায়েতে শুধু মুখে মাস্ক পরে সংক্রমণ আটকানো সম্ভব কিনা?
ছোট বাগানেও একই সমস্যা রয়েছে। সেখানেও এক একটি বাগানে নিদেন পক্ষে একশো শ্রমিক কাজ করেন। চা মালিকদের সংগঠন ইন্ডিয়ান টি প্লান্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের মুখ্য উপদেষ্টা অমিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, “আগামী কাল থেকেই সব বাগানে প্রচার করা হবে। আশা করব রাজ্য সরকার স্বাস্থ্য দফতরকেও এ বিষয়ে বলবেন, শ্রমিকদের মাস্ক দেওয়ার ব্যবস্থা করলে ভাল হয়।” গুজব ছড়ানোর আশঙ্কাও করছে মালিকপক্ষ। এক চা বাগান মালিকের কথায়, “কোনওভাবে যাতে করোনা নিয়ে গুজব না ছড়িয়ে পড়ে। ভয় পেয়ে শ্রমিকরা কাজে না এলে সমূহ ক্ষতি অপেক্ষা করে আছে।’’
এ বছর ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহ থেকে পাতা তোলা শুরু হয়েছে। ফার্স্ট ফ্লাশের পাতা তোলা শুরু হওয়ার মাসখানেকও কাটেনি, তার মাঝেই উপস্থিত হয়েছে করোনা সঙ্কট।