পিজি হাসপাতাল চত্বরে পড়ে কমলবালা মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র
করোনা-যোদ্ধা হয়েও চিকিৎসা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন মালদহের ক্যানসার আক্রান্ত আশাকর্মী কমলাবালা মণ্ডল। তাঁর পরিজনদের অভিযোগ, অসুস্থ ওই আশাকর্মীকে কলকাতার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। উন্নত চিকিৎসার জন্য সেখান থেকে ১০ সেপ্টেম্বর তাঁকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে ‘রেফার’ করা হয়। অভিযোগ, ‘শয্যা নেই’ জানিয়ে ক্যানসার আক্রান্ত ওই আশাকর্মীকে সেখানে ভর্তি নেওয়া হয়নি। সেই দিন থেকে এসএসকেএম হাসপাতাল চত্বরের একটি গাছের নিচে পরে থেকে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন ওই আশাকর্মী। করোনা-যোদ্ধা ওই সহকর্মীর এমন পরিণতিতে ক্ষোভ ছড়িয়েছে জেলার আশাকর্মীদের মধ্যে।
স্থানীয় ও প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ৪৫ বছরের কমলাবালার বাড়ি কালিয়াচক ২ ব্লকের বাঙ্গিটোলা পঞ্চায়েতের আকন্দবাড়িয়া গ্রামে। স্বামী ও দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে সংসার। বাঙ্গিটোলার বড় ফিল্ড কলোনিতে দীর্ঘদিন ধরে তিনি স্বাস্থ্য পরিষেবা দিয়ে আসছেন। গত দু’মাসে এই এলাকার প্রায় ৭ জন করোনা সংক্রমিত হয়েছেন। তাঁর এলাকার করোনা আক্রান্ত এক গর্ভবতীকে কোভিড হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা তিনিই করেন। সম্প্রতি অসুস্থ হয়ে পড়েন কমলাবালা।
পরিবার সূত্রে খবর, মালদহে তাঁর পেটে ছোটখাটো একটি অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। অগস্টের শেষে অসুস্থতা বাড়লে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার চিকিৎসা করানো হয়। সে সময় জন্ডিস ধরা পড়ে। তবে শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় তাঁকে কলকাতায় ‘রেফার’ করা হয়েছিল। পরিজন ২ সেপ্টেম্বর তাঁকে কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।
ওই আশাকর্মীর ছেলে মৃন্ময় বলেন, "১০ সেপ্টেম্বর এসএসকেএম হাসপাতালে মাকে রেফার করা হয়। সেখানকার জরুরি বিভাগে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করিয়ে ভর্তির চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু বলা হয় বেড খালি নেই। পরের দিন আউটডোরে ডাক্তার দেখিয়েও ভর্তি করা যায়নি। সেই থেকে মা হাসপাতালের গাছতলায় কার্যত বিনা চিকিৎসায় পড়ে রয়েছেন।"
মৃণ্ময়ের অভিযোগ, তাঁর মাকে ভর্তি করার বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বারবার অনুরোধ করা হলেও লাভ হয়নি। তাঁর দাবি, এ দিন বিকেলের দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, কমলাবালাকে শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে শুধু থাকার ব্যবস্থা করে দেবেন, কিন্তু চিকিৎসার বিষয়টি তাঁরা বলতে পারবেন না। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘মা এক জন স্বাস্থ্যকর্মী এবং করোনা যোদ্ধা হলেও এ ভাবে চিকিৎসা না পেয়ে হাসপাতালের বাইরে পড়ে রয়েছে। শেষ পর্যন্ত ওকে বাঁচাতে পারব কিনা বুঝতে পারছি না।’’
এ নিয়ে মালদহ জেলার আশাকর্মী সংগঠনের অন্যতম নেত্রী বেবি চক্রবর্তী মিশ্র বলেন, "এক জন আশাকর্মী ও করোনা-যোদ্ধাকে যদি এ ভাবে বিনা চিকিৎসায় থাকতে হয় তার চেয়ে দুর্ভাগ্যের আর কিছু নেই।" কালিয়াচক ২ ব্লকের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক কৌশিক মিস্ত্রি বলেন, "কমলার কথা শুনেছি। জেলার স্বাস্থ্যকর্তাদের বিষয়টি জানিয়েছি। ব্লকের স্বাস্থ্যকর্মীরা চাঁদা তুলে কমলার চিকিৎসায় সাহায্য করতে পাশে দাঁড়াব।"