নেশায় হাত পাকিয়েছে শহরের একাধিক এলাকার যুবক-যুবতীদের একাংশ।
স্কুলপড়ুয়া থেকে বেকার যুবক, মাদকের চোরাকারবারের ‘শিকার’ শিলিগুড়ির বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ।
অভিযোগ, শুধু ডেনড্রাইট বা কাশির সিরাপ নয়, গাঁজা ও ব্রাউন সুগারে রীতিমতো হাত পাকিয়েছে শহরের একাধিক এলাকার যুবক-যুবতীদের একাংশ। স্কুলপড়ুয়াও বাদ যাচ্ছে না। পুলিশের দাবি, শহরে হঠাৎ বেড়ে যাওয়া অপরাধের পিছনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাদকের টাকা জোগাড় করার তাগিদই টের পাওয়া গিয়েছে। তা থেকেই মোটরবাইক চুরি, ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা। কিন্তু তা সত্ত্বেও মাদক বিরোধী কোনও টাস্ক ফোর্স এবং নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠেনি বলে অভিযোগ। শহরবাসী চাইছেন, মাদকের বিরুদ্ধে যৌথ লড়াই।
দেশবন্ধুপাড়ায় গত সপ্তাহে খুন হয়েছেন বৃদ্ধ। খুনের অভিযোগে নাতি এবং চার নাবালক, এক যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার পরেই তদন্তে সামনে এসেছে, নেশার টাকা জোগাড় করাই লক্ষ্য ছিল খুনে অভিযুক্ত নাবালকদের।
তদন্তকারীদের একাংশের বক্তব্য, স্কুল বা কলেজ স্তরে প্রথামে ‘লামা’ অর্থাৎ স্বল্প মাত্রার সেবন দিয়ে শুরু হয় মাদকের ব্যবহার। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে নিয়মিত ভাবে ইঞ্জেকশন নেওয়ায়। শিলিগুড়ি জংশন এলাকায় রাতে নিয়মিত ভাবে মাদকের জোগান আসে বলে অভিযোগ। তা বিভিন্ন দোকানে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করে স্থানীয় যুবক, কিশোর।
এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ, সন্ধ্যা হলেই প্রধাননগর, বাঘাযতীন পার্ক, শিলিগুড়ি কলেজের চারপাশ বসছে মাদকের আসর। আবার হিলকার্ট থেকে সেবক রোড বা সিটি সেন্টারে নেশার ঠেকের অভিযোগ মাঝেমধ্যে পৌঁছচ্ছে পুলিশের কাছেও। পুলিশ সূত্রে খবর, ভক্তিনগর থানার আশিঘর ফাঁড়ি এলাকায় গত মাসে বেশ কয়েকটি চুরির ঘটনা ঘটেছিল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অভিযুক্ত যুবকদের ধরতে পেরেছে পুলিশ। কিন্তু তাতে নেশার টাকা জোগাতেই সোনা এবং টাকা চুরির ঘটনা সামনে এসেছে। শহরে বেড়েছিল ছিনতাই। এই সমস্ত ঘটনার পিছনে মাদকের প্রভাব যে রয়েছে, তা অস্বীকার করছে না পুলিশ।
শিলিগুড়ি কমিশনারেটের ডিসি (পূর্ব) ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান নিয়মিত চলে। মাদক সমেত বিভিন্ন থানায় প্রচুর অপরাধী ধরাও পড়ছে। মাদক বিরোধী লড়াইয়ে প্রতিনিয়ত চিন্তাভাবনা চলছে।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, শহরের বাইরে থেকে গাঁজা, ব্রাউন সুগার নিয়মিত ভাবে ঢোকে বলে অভিযোগ। শহরে মাদক নিয়ে কাজ করা একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের দাবি, এর পিছনে যেমন সমন্বয় প্রয়োজন তেমনই প্রয়োজন সরকারি সাহায্য। মাদক বিরোধী অভিযান নিয়ে প্রায় ১৫ বছর বিভিন্ন সংস্থায় কাজ করছেন বিকাশ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘সরকারি সাহায্য বন্ধ হওয়ায় শহরে একাধিক বেসরকারি সংস্থা প্রচুর টাকা নিয়ে পুনর্বাসন দেওয়ার রাস্তা নিয়েছে। কিন্তু বেশি পয়সার জন্য অনেকেই সেগুলিতে যাচ্ছেন না। প্রয়োজন যৌথ নজরদারি।’’