ফাইল চিত্র।
দার্জিলিঙের বদল হতে থাকা রাজনীতির ছোঁয়া লাগল পাহাড়ের সরকারি কর্মীদের মধ্যেও। সোমবার দুপুরে পাহাড়ের অস্থায়ী সরকারি কর্মীদের সংগঠন ইউনাইটেড এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন জানিয়ে দেয়, দীর্ঘদিনের দাবিদাওয়া পূরণ না করতে পারায় তারা বিনয় তামাংপন্থী মোর্চার ছত্রছায়া থেকে বার হয়ে যাচ্ছে। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বিকেলে আর একটি নতুন সংগঠন তৈরির ঘোষণা করা হয়েছে। আপাতত সরকারি কর্মীরা বিনয় তামাং এবং বিমল গুরুং— এই দুই শিবিরে ভাগ হয়ে গেলেন কি না, সেই প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে।
পুরানো সংগঠনের তরফে এ দিন জানানো হয়, বিনয় তামাং, অনীত থাপা ক্ষমতাসীন হওয়ার পর তিন বছর হতে চলল। কিন্তু তাঁদের স্থায়ীকরণের কিছুই হয়নি। তাই তাঁরা বিনয়, অনীতদের থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। এ বার থেকে সংগঠনটি নিরপেক্ষ সংগঠন হিসেবে কাজ করবে। ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মোর্চার বিনয়পন্থীদের তরফে জানানো হয়, ওই সংগঠনের কয়েক জন নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে এ সব করছেন। আজ, মঙ্গলবার একেবারে নতুন সংগঠন ‘জিটিএ কর্মচারী সংগঠন’ পাহাড়ে আত্মপ্রকাশ করবে।
মোর্চা সভাপতি বিনয় তামাং বলেছেন, ‘‘অস্থায়ী কর্মীদের দাবি ন্যায়সঙ্গত। আমরা সরকারের সঙ্গে টানা নিয়ে আলোচনা করছি। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর শিলিগুড়ির প্রশাসনিক বৈঠকেও বিষয়টি উঠেছে। এই সময় সমর্থন করা বা না করার মতো কথা বলাটা রাজনীতি বলেই মনে হচ্ছে।’’ ইউনাইটেড এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সচিব সুভাষ ছেত্রী বলেছেন, ‘‘আমরা তো ওঁদের পাশে বরাবর থেকেছি। টানা আন্দোলন করছি। আখেরে কিছু না হওয়ায় আমরা অরাজনৈতিক সংগঠন হয়ে যাচ্ছি। এতে আন্দোলনের ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা থাকবে না। রাজনীতির অভিযোগ ভিত্তিহীন।’’
জিটিএ সূত্রের খবর, সুবাস ঘিসিংয়ের আমলে পার্বত্য পরিষদ তৈরি হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন দফতরে যাদের নেওয়া হয়েছিল, তাঁদের এখনও স্থায়ী করা হয়নি। বর্তমানে জিটিএ-র বিভিন্ন দফতর, শাখা বা বিভাগ মিলিয়ে গ্রুপ এ-তে ৩১০, গ্রুপ বি-তে ৫২১ জন, গ্রুপ সি-তে ২৫২৬ জন এবং গ্রুপ ডি পদে ৭৭৫ জন কর্মী কাজ করছেন। ২০০৭ সাল থেকে অস্থায়ী কর্মীরা আন্দোলনে নামেন। ২০০৯ সালে শূন্যপদের ভিত্তিতে কর্মীদের চাকরির শর্তের সময়, মেয়াদ, অভিজ্ঞতাকে ধরে স্থায়ী নিয়োগের জন্য রাজ্য নির্দেশ দেয়। কিন্তু পাহাড়ে পরপর রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য তা কার্যকরী হয়নি। ২০১১ সালে রাজ্য তরফে বেতন কাঠামো ঠিক করা হলেও স্থায়ীকরণের বিষয়টি ঝুলেই আছে। ১৭ অগস্ট থেকে একজোট হয়ে ইউনাইটেড এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের ছাতার তলায় আন্দোলনে নামেন। ১ সেপ্টেম্বর থেকে পাহাড়ে কর্মবিরতি শুরু হয়। পরে তা পুজোর জন্য উঠে যায়।
এবার কি তাহলে পাহাড়ের রাজনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে দুই শিবিরে ভাগ হলেন সরকারি কর্মীরা। মোর্চার বিনয়পন্থীদের মুখপাত্র কেশব রাজ পোখরেল বলেন, ‘‘কর্মী সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির মুষ্টিমেয়দের রাজনৈতিক কারণে ঘোষণা ওদের সদস্যরাই মানছেন না। সবাই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। তাই নতুন সংগঠন হচ্ছে। আমি জিটিএ কর্মীদের স্থায়ীকরণ করার ব্যবস্থা করবই।’’