Mamata Banerjee Declaration for Tea Workers

পাট্টা থেকে ভাতা, মমতার ঘোষণায় বিতর্ক

আলিপুরদুয়ার শহরের প্যারেড গ্রাউন্ডে রবিবার সভা করেন মুখ্যমন্ত্রী। নিজের হাতে তিনি ৩১টি প্রকল্পে ৩৯ জন উপভোক্তাকে সরকারি পরিষেবা তুলে দেন, যাঁদের মধ্যে দশ জন চা শ্রমিকের হাতে তুলে দেন জমির পাট্টা।

Advertisement

পার্থ চক্রবর্তী

আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:০১
Share:

চা শ্রমিকদের শুধু জমির পাট্টাই নয়, সেই জমিতে বাড়ি বানানোর জন্য অর্থও দেবে রাজ্য সরকার। চা বলয় প্রধান আলিপুরদুয়ারে রবিবার তাঁর সরকারের নতুন এই পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চা শ্রমিকদের পাট্টা দেওয়ার কাজ দ্রুত করতে জমি অধিগ্রহণের কাজে নজর দেওয়ার নির্দেশ দিলেন প্রশাসনের আধিকারিকদের। সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জানালেন, বন্ধ চা বাগানের শ্রমিকেরা চলতি মাস থেকেই প্রতি মাসে দেড় হাজার টাকা করে পাবেন। বিনামূল্যে পাবেন বিদ্যুৎ পরিষেবা। মমতার এই ঘোষণাকে কটাক্ষ করে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার নদিয়ায় বলেন, ‘‘দেড় হাজার টাকা ভাতায় কি তাঁদের (শ্রমিকদের) সংসার চলবে? এত ত্রাণ দিচ্ছেন আপনি। পরিত্রাণ চাই। কর্মসংস্থান চাই। চা বাগান বন্ধ হয়েছে। দু’টো কারখানা খুলে দিন, যাতে কর্মসংস্থান হয়। বন্ধ চা বাগান খোলা হচ্ছে না। চা বাগানের জমি রিসর্ট করার জন্য শিল্পপতিদের দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। শিল্পপতিদের বিরুদ্ধে যাতে বাগানের কর্মীরা বিক্ষোভ না-দেখান, ঘেরাও না করে তার জন্য ঘুষ দেওয়া হচ্ছে।’’

Advertisement

আলিপুরদুয়ার শহরের প্যারেড গ্রাউন্ডে রবিবার সভা করেন মুখ্যমন্ত্রী। নিজের হাতে তিনি ৩১টি প্রকল্পে ৩৯ জন উপভোক্তাকে সরকারি পরিষেবা তুলে দেন, যাঁদের মধ্যে দশ জন চা শ্রমিকের হাতে তুলে দেন জমির পাট্টা। মুখ্যমন্ত্রী জানান, তাঁর উত্তরবঙ্গ সফরের এই পর্বে আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি জেলা ছাড়াও শিলিগুড়ি মিলিয়ে প্রায় তেরো হাজার জমির পাট্টা বিলি হবে, যার মধ্যে আলিপুরদুয়ার জেলাতেই রয়েছে ছ’হাজারের উপরে পাট্টা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা প্রত্যেক শ্রমিককে চা বাগানের পাট্টা দেব। এখনও পর্যন্ত আমরা অনেক জমি অধিগ্রহণ করেছি। কাজ চলছে।’’এর পরেই সরকারের অন্য পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “আমরা চা সুন্দরী করেছি। এই প্রকল্পে এক হাজারের উপরে ঘর মিলেছে। কিন্তু আমরা ভাবছি, চা সুন্দরী না দিয়ে যে জমিতে আমরা পাট্টা দিচ্ছি, সেখানে এক লক্ষ ২০ হাজার টাকাও পাট্টার সঙ্গে দিয়ে দেব। তা হলে আপনারা ঘর বানিয়ে নেবেন। এটা আগামী দিনে আমরা করব।” আবাসন দফতর সূত্রের খবর, চা সুন্দরী প্রকল্পে ‘টু বিএইচকে’ এক-একটি আবাসন গড়তে খরচ হয়েছে পাঁচ লক্ষাধিক টাকা। মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণায় কুমারগ্রামের নিউল্যান্ডস চা বাগানের শ্রমিক কুন্দন চিক বরাইক বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণায় আমরা যে কতটা খুশি বলে বোঝাতে পারব না। আমাদের নিজের স্বপ্নের বাড়ি তৈরি হতে আর দেরি নেই।”

বোনাস নিয়ে সমস্যার জেরে, পুজোর সময় আলিপুরদুয়ার-সহ ডুয়ার্সের একের পরে এক চা বাগান বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের বক্তব্যে বন্ধ চা বাগান শ্রমিকদের প্রসঙ্গও ওঠে। তিনি শ্রম দফতরের আধিকারিকদের নির্দেশ দেন, “যে সব চা বাগান বন্ধ, সেখানে ওঁদের দেড় হাজার টাকা করে মাসে দিন। ওঁদের বিদ্যুৎও বিনামূল্যে দিন। পানীয় জল ও স্বাস্থ্য পরিষেবাও দিন। শ্রম দফতরকে আমি নির্দেশ দিচ্ছি, এই মাস থেকে দেড় হাজার টাকা দেওয়া শুরু হোক।”

Advertisement

আলিপুরদুয়ার প্রশাসনের এক কর্তা জানান, বন্ধ চা বাগানের শ্রমিকরা প্রত্যেকেই মাস পিছু দেড় হাজার টাকা করে করে ‘ফাউলাই’ পান। পুজোর সময় থেকে বন্ধ হওয়া জেলার পাঁচটি বাগানের শ্রমিকেরা যাতে অবিলম্বে এই প্রকল্পের অধীনে চলে আসেন, মুখ্যমন্ত্রী সম্ভবত তা-ই বলতে চেয়েছেন। তবে শ্রম দফতরের আলিপুরদুয়ারের এক আধিকারিক বলেন, “যত দূর জানি, চা বাগান বন্ধ হওয়ার এক বছরের মধ্যে শ্রমিকদের ফাউলাই দেওয়ার নিয়ম নই। তবে মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের ঘোষণার পরে, সে সংক্রান্ত নতুন নির্দেশ রাজ্য থেকে আসবে বলে আমরা আশাবাদী।”

মাদারিহাটের বিধায়ক তথা রাজ্য বিধানসভায় বিজেপির মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী এ দিন চা শ্রমিকদের বাড়ি বানিয়ে দিতে এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন। তার থেকে এক টাকা কমও বললেন না, বেশিও বললেন না। আসলে আবাস যোজনায় একটি বাড়ি তৈরি করতে কেন্দ্রীয় সরকার এই এক লক্ষ ২০ হাজার টাকাই বরাদ্দ করে। এ বার কেন্দ্রের টাকায় চা শ্রমিকদের বাড়ি বানিয়ে নিজের নামে প্রচার করবেন।” রাজ্যসভার সদস্য তথা তৃণমূলের আলিপুরদুয়ার জেলা সভাপতি প্রকাশ চিক বরাইক পাল্টা বলেন, “আবাসের সরকারি নিয়মেই বলা রয়েছে, ব্যক্তিগত ভাবে কারও বাড়ি বা ঘর বানাতে এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা দেওয়া যায়। রাজ্য সরকার সে নিয়মের বাইরে যাচ্ছে না। এ জন্য মনোজ টিগ্গাদের চিন্তা করতে হবে না।
এ ঘর রাজ্য সরকার নিজের অর্থে বানাবে।”

মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না বন্ধ বাগানের শ্রমিকদের অনেকেই। কালচিনি চা বাগানের শ্রমিক মঞ্জু ওরাওঁ বলেন, “প্রতি মাসে দেড় হাজার টাকা নয়। আমরা চাই, বাগান খুলুক। ওই টাকায় পাঁচ জনের সংসার চালানো সম্ভব নয়।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement