শিবির: তখন চলছিল সঙ্ঘের ক্লাস। নিজস্ব চিত্র
সকাল হতেই মাঠে জড়ো হয়ে যাচ্ছিলেন বেশ কয়েকজন। তারপর থেকে টানা ঘণ্টাদুয়েক চলছিল ক্লাস, শরীর চর্চা, আলোচনা সভা। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় লাগোয়া শিবমন্দির বিএড কলেজের মাঠে এভাবেই নিয়মিত চলছিল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) শাখার ক্লাস। সংগঠনের পতাকা পুঁতে, ভারতমাতার ছবি রেখে চলত ক্লাস। তা নিয়েই শুরু হয় বিতর্ক। স্কুল-কলেজের মাঠে খেলাধূলা, ব্যয়াম, প্রাতঃভ্রমণ হতে পারে। কিন্তু নিয়মিত কোনও সংগঠনের কাজকর্ম কেন হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে তৃণমূল।
শিক্ষা দফতর, কলেজের পরিচালন সমিতি-সহ বিভিন্ন স্তরে অভিযোগ পৌঁছয়। বুধবার রাতেই কলেজ কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মৌখিকভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে কলেজে জরুরি বৈঠক ডাকা হয়। সেখানে অভিযোগ ওঠে আরএসএস বিনা অনুমতিতে কলেজ চত্বরের মাঠে ক্লাস করছে। কলেজের ছাত্র সংগঠন ছাড়া আর কাউকে যাতে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য মাঠ ব্যবহার করতে না দেওয়া হয় সেই সওয়ালও করেছেন কলেজের অনেকে। বৈঠকে ঠিক হয়েছে শুধুমাত্র কলেজ চলার সময় কলেজ ও মাঠের গেট খোলা থাকবে।
কলেজের অধ্যক্ষ বিভূতিভূষণ সারেঙ্গি বলেন, ‘‘আমাদের মাঠে আরএসএসের ক্লাস নিয়ে অভিযোগ এসেছে। পরিচালন সমিতি থেকেও ব্যবস্থা নিতে বলেছে। আমরা মাঠের গেট দু’টি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।’’ তিনি জানান, কলেজ ভবনের সামনের গেট কলেজ না চললে বন্ধ থাকে। মাঠের দু’টি গেট খোলা। বাসিন্দারা তা ব্যবহার করছিলেন। কারা নিয়মিত আসছিলেন তা তিনি জানতেন না বলে জানান।
বিএড কলেজে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে বিভিন্ন এলাকা থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকারাও পড়তে আসেন। তৃণমূলের দাবি, সকাল ৭টা থেকে আরএসএসের ক্লাস চালু হয়ে যাচ্ছিল। কলেজ খোলে সকাল ১০টা নাগাদ, তখনও গেরুয়া বাহিনীর অনেকেই এলাকায় ঘুরছিলেন বলে অভিযোগ।
শিলিগুড়ি মহকুমার বিভিন্ন স্কুল বা খোলা মাঠে আরএসএসের শাখা হয়। শিলিগুড়ির স্টেশন ফিডার রোডের হিন্দি হাইস্কুলে সারা বছর ক্লাস চলে। স্কুলের তরফে অনুমতি নিয়ে সেখানে প্রতি বছরই গেরুয়া শিবিরের অনুষ্ঠান হয়। শিলিগুড়ি এলেই এই মাঠে অনুষ্ঠানে আসেন মোহন ভাগবত থেকে শুরু করে দিলীপ ঘোষেরা। সূত্রের খবর, বিজেপি বা গেরুয়া শিবিরের তৎপরতায় সম্প্রতি মহকুমার বিভিন্ন প্রান্তে শাখা হচ্ছে। সেই মতো এই মাঠেও বেশ কিছুদিন ধরে শাখা হচ্ছিল।
তৃণমূলের দার্জিলিং জেলার নেতা তথা শিলিগুড়ি কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি জয়ন্ত কর বলেন, ‘‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠ প্রয়োজনে ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা বা শিক্ষাকর্মীরা ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু ঝান্ডা পুঁতে শিবির অত্যন্ত নিন্দনীয়।’’ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন, দলের শিক্ষা সেলের নেতা তথা শিলিগুড়ি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সম্পাদক সুপ্রকাশ রায়ও। তিনি বলেন, ‘‘আমরা কলেজদের পরিচালন সমিতির সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলছি।’’
বৃহস্পতিবার থেকে হচ্ছে না ওই ক্লাস। আরএসএসের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, ওই মাঠে স্থায়ীভাবে কিছুই হয়নি। মাঠে বসে আলোচনা, শরীর চর্চা চলছিল। কলেজের আপত্তি থাকলে তা হবে না।