জেলার ১৫টি ব্লকের মধ্যে ৮টি ব্লকেই প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার ছিল ৭০ শতাংশের নিচে। গত মাসের গোড়ায় ‘আনন্দী’ প্রকল্প শুরু হওয়ার পর থেকেই ছবিটা পাল্টাতে শুরু করেছে মালদহে। ওই প্রকল্পের হাত ধরে দেড় মাসের মাথায় মালদহে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে একাধিক ব্লকে ৯০ শতাংশ ছুঁইছুঁই।
বুধবার স্বাস্থ্য দফতরের জেলাওয়াড়ি তথ্য বিশ্লেষণে ওই পরিসংখ্যান উঠে এসেছে। পাঁচ বছর আগেও জেলায় প্রাতিষ্ঠানিক তথা হাসপাতালে প্রসবের হার ছিল মাত্র ৪২ শতাংশ। সেই হার দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে যাওয়ায় স্বভাবতই স্বস্তিতে স্বাস্থ্যদফতর ও প্রশাসন। একমাত্র মানিকচক ব্লক ছাড়া প্রতিটি ব্লকেই প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। ওই ব্লকের ভূতনি চরে লক্ষাধিক মানুষের বাস। যোগাযোগের সমস্যায় তাদের হাসপাতালে পৌঁছাতে সমস্যা হচ্ছে। ফলে ভূতনি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শয্যা চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের ক্ষেত্রে শতাংশের নিরিখে জেলার মধ্যে বামনগোলা ব্লক প্রথম, চাঁচল-১ ব্লক দ্বিতীয় ও হরিশ্চন্দ্রপুর-১ ব্লক তৃতীয় স্থানে রয়েছে বলেও স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দিলীপ মণ্ডল বলেন, ‘‘জেলায় মানিকচক বাদে প্রতিটি ব্লকেই প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার বেড়ে গিয়েছে। প্রসূতিদের হাসপাতালমুখী করতে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে নানাভাবে লাগাতার প্রচার চলছে! তার ফলও মিলছে।’’
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, গত নির্বাচনের আগে চোপরায় প্রচারে এসে মুখ্যমন্ত্রী দুই দিনাজপুর ও মালদহে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার ৮৫ শতাংশ করতে হবে বলে জানিয়েছিলেন। তারপর থেকেই নড়েচড়ে বসে স্বাস্থ্য দফতর। সেপ্টেম্বর মাসের প্রথমেই চালু করা হয় ‘আনন্দী’ প্রকল্প। ফজলি আমকে ম্যাসকট করে প্রচার শুরু হয়।
বাড়িতে আর হাসপাতালে প্রসবের মধ্যে পার্থক্যের কথাই প্রচারে গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরছে স্বাস্থ্য দফতর। মাইকে প্রচারের পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় বড় হোর্ডিং, ফ্লেক্স, ফেস্টুনেও চলছে ‘আনন্দী’র প্রচার। ম্যাসকট ফজলিবাবু প্রচারে বলছেন, কেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রসব জরুরি। ওই কাজে স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে প্রচারে সামিল করা হয়েছে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, আশাকর্মীদেরও। আর তাতেই ফল মিলছে।
স্বাস্থ্য দফতর জানায়, হাসপাতাল প্রসূতি ও শিশু দু’জনের পক্ষেই নিরাপদ। কেননা, সদ্যোজাতকে পোলিও, হেপাটাইটিস, বিসিজি টিকা সঙ্গে সঙ্গে দেওয়া হয়। প্রয়োজন হলে শিশুর জন্য এক বছর ও মায়ের জন্য তিন মাস নিখরচায় ওষুধ দেওয়া হয়। পাশাপাশি সদ্যোজাতকে নিয়ে ফেরার সময় প্রসূতিদের পকেট ক্যালেন্ডার দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছেয় ওই ক্যালেন্ডারে কবে কোন টিকা জরুরি, লিখে দেওয়া হচ্ছে তাও। আর ‘আনন্দী’র হাত ধরে এভাবেই প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে মালদহে।