বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। —ফাইল চিত্র।
শিলিগুড়ি পুরসভার বোর্ড মিটিংয়ে দলের বরো চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিলেন তৃণমূল পুরপ্রতিনিধি রঞ্জন শীলশর্মা। বিষয়টিকে সামনে রেখে এ বার শিলিগুড়ি পুরসভায় অনিয়মের অভিযোগ তুলে আসরে নেমে পড়ল বিজেপি।
শনিবার পুরসভার বিরোধী দলনেতা অমিত জৈন এবং বিবেক সিংহকে পাশে বসিয়ে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, দুর্নীতি অভিযোগ সাত দিনের মধ্যে তদন্ত করে দেখতে হবে। না হলে রাজ্যপাল এবং ‘এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেটকে’ (ইডি) জানানো হবে। পুরসভার অন্দরেও শাসক দলে ওই অভিযোগ ঘিরে চাপানউতোর শুরু হয়েছে। শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব বলেন, ‘‘ঘটনা না জেনেই বিধায়ক এ সব বলছেন। তদন্তের কোনও বিষয় নয়। এক ওয়ার্ড ছেড়ে আর এক ওয়ার্ডে কাজ করছেন ওই কর্মী। বরো চেয়ারম্যানের সঙ্গে সমস্যাটি নিয়ে কথা বলে তা দেখা হবে। দুর্নীতির কিছু নেই। তা নিয়ে রাজ্যপাল, রাষ্ট্রপতি যেখানে খুশি যেতে পারেন।’’ মেয়রের আরও দাবি, ‘‘আমি যেখানে আছি সেখানে কোনও দুর্নীতি হতে দিই না।’’
উল্টো দিকে, বিধায়কের অভিযোগ, মেয়র ঘটনাটি আলোচনা করে মিটিয়ে নিতে বলছেন। এটা তৃণমূলের দলীয় বিষয় নয়। এর সঙ্গে স্টেট আরবান ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (সুডা), নগরোন্নয়ন দফতর জড়িয়ে। এই অভিযোগ ওঠা মানে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের দফতরেই অর্থনৈতিক কাজকর্ম, অস্বচ্ছতার প্রশ্ন উঠছে। বিধায়ক বলেন, ‘‘মন্ত্রীর কাছে বোর্ড সভার ভিডিয়ো ক্লিপিংস এবং সমস্ত বিষয়টি জানাব। সরকারি টাকা এ ভাবে আত্মসাৎ করা হচ্ছে কি না মন্ত্রী, মেয়রকে তদন্ত করার দাবি রাখছি। সাত দিনের মধ্যে না করা হলে রাজ্যপাল এবং ইডি’র কাছে জানাব।’’
ঘটনার সূত্রপাত শুক্রবার পুরসভার বোর্ড মিটিংয়ে। তৃণমূল পুরপ্রতিনিধি রঞ্জন শীলশর্মা প্রশ্ন তোলেন, তাঁর ওয়ার্ড থেকে এক সাফাই কর্মীকে না জানিয়েই বরোয় নেওয়া হয়েছে। অথচ, ওই কর্মীর বিরুদ্ধে কাজে অনুপস্থিতির অভিযোগ রয়েছে। মাসে বেশির ভাগ দিন কাজ না করলেও কার্যত তাঁর পুরো মাসের বেতন হয়েছে কী ভাবে, সেই প্রশ্ন তোলেন রঞ্জন। এ নিয়ে ৫ নম্বর বরো চেয়ারম্যান প্রীতিকণা বিশ্বাসের বিরুদ্ধে সরব হন তিনি। প্রীতিকণা দীর্ঘদিনের সিপিএম পুরপ্রতিনিধি, মহিলা সমিতি করতেন বলে সভায় সরব হন রঞ্জন। বোর্ড সভায় তা নিয়ে তুমুল বাগবিতণ্ডা হয়।
সাফাই বিভাগের মেয়র পারিষদ মানিক দে-ও জানান, কর্মীকে ওয়ার্ড থেকে বরোয় কাজে নেওয়ায় অনিয়ম হয়েছে। পরে মেয়র বিষয়টি বরোয় আলোচনা করে মেটানো হবে, না হলে বোর্ড সভায় আলোচনা করা হবে বলে জানান তিনি।
বিধায়কের প্রশ্ন, ‘‘এর আগেও বিধান রোডে অবৈধ বহুতল নিয়ে তৃণমূল রঞ্জন প্রশ্ন তুলেছিলেন। সেটাও কি এ ভাবে আলোচনা করে মেটানো হচ্ছে বুঝতে পারছি না। এ ভাবে শিলিগুড়ি পুরসভা দুর্নীতির আঁতুরঘরে পরিণত হবে। সাফাই কর্মীর বিষয়টিতে তৃণমূলের লোকজন কাজে অনুপস্থিতি থেকে উপস্থিত দেখিয়ে দিনের পর দিন টাকা তুলছে। তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।’’