সারের দোকানে অভিযান। মঙ্গলবার কোচবিহারে। —নিজস্ব চিত্র।
শীতের আনাজ পোঁতা শুরু হয়েছে। আলু চাষের প্রস্তুতিও নিয়েছেন অনেকে। আমন ধানের বয়স আড়াই মাস পার হয়েছে। সব মিলিয়ে সারের কদর বাড়তে শুরু করেছে। আর এই সময়েই ‘সার নেই-সার নেই’ বলে হাওয়া উঠেছে বাজারে। ফলে, ৪০০ টাকার প্যাকেটের ইউরিয়া কিনতে হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা দিয়ে। চাষিদের একটা বড় অংশের অভিযোগ, কোচবিহারের বহু বাজারে সারের কালোবাজারি হচ্ছে এমন করেই। প্রায় সমস্ত সার কেজি প্ৰতি ১০ থেকে ১২ টাকা বেশি দাম নেওয়া হচ্ছে। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ কৃষকেরা।
এমন অভিযোগ পেয়ে মঙ্গলবার থেকে কৃষি দফতরের একটি দল সারের দোকানে দোকানে হানা দিতে শুরু করেছে। তুফানগঞ্জের ঝাউকুঠি, বালাভূত, বক্সিরহাট-সহ একাধিক জায়গায় অভিযান চালিয়ে চার জন ব্যবসায়ীকে ‘শো-কজ়’ করা হয়েছে। তিন জন ব্যবসায়ীকে সার বিক্রি বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। লাইসেন্স ছাড়া, সার বিক্রির অভিযোগে এক জনের মজুত সার বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। কোচবিহার জেলা কৃষি আধিকারিক গোপাল মান বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই এমন অভিযোগ পেয়ে তা খতিয়ে দেখার কাজ শুরু করা হচ্ছে। যাঁদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পাওয়া যাবে, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিছু তথ্য আমরা হাতে পেয়েছি।’’ ‘সার ও কৃষি উপকরণ ব্যবসায়ী সমিতি’র কোচবিহার জেলা সম্পাদক জগবন্ধু সাহাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘সারের জোগান কম হওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। অতিরিক্ত দাম নেওয়া হলে, তা ঠিক নয়। কেউ যদি এমন করে থাকে, প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।’’
কোচবিহার জেলায় এই সময় চাষের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে সব থেকে বেশি আনাজ চাষ হয়। সেই সঙ্গে আলু চাষও শুরু হওয়ার মুখে। সে জন্য বাজারে সারের চাহিদা তুঙ্গে। জিরানপুরের কৃষক নিজামুদ্দিন মিয়াঁ বলেন, ‘‘ইউরিয়া, ফসফেট, ডিএসপি, পটাশ সব ক’টি সারের দাম বেশি। প্রায় দ্বিগুণ। আমাদের কোনও উপায় নেই বলে ওই টাকা দিয়েই কিনছি।’’ আর এক কৃষক তরণীকান্ত বর্মণ বলেন, ‘‘একটি পঞ্চাশ কেজির সারের বস্তার দাম ৪০০ টাকা লেখা রয়েছে প্যাকেটে। অথচ, তা আমি কিনেছি ৭৫০ টাকা দিয়ে। তার নীচে ওই সার বিক্রি সম্ভব নয় বলে দোকানিরা জানিয়েছেন। তাই বাধ্য হয়ে কিনতে হচ্ছে।’’ আবার দেওয়ানহাটের কৃষক পরেশ দেব জানান, প্রত্যেক সার কেজি প্ৰতি ১০ থেকে ১২ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে।
কৃষকদের অভিযোগ, প্ৰত্যেক বছর যে সময়ে সারের চাহিদা বাড়ে তখনই কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে কালোবাজারে ওই সার বিক্রি করা হয়। গ্রামের বাজারগুলিতে তেমন ভাবে কোনও নজরদারি না থাকায় বিক্রেতাদের আরও সুবিধা বেশি। সে জন্যে গ্রামে নজরদারি বাড়ানোর দাবি করা হয়েছে। কৃষকদের কয়েক জনের কথায়, ‘‘ছোট কৃষকেরা বেশির ভাগই গ্রামের ছোট বাজারগুলির উপরে নির্ভরশীল। সেই সুযোগেই অনেকে কালোবাজারি করে।’’