Child Labour

শিশু শ্রমিক কে, বুঝতে সমীক্ষা লাগে

ধান কাটার পরে আলু বোনার কাজ চলছে। আলু বুনতে নাবালক-নাবালিকাদের চাহিদা বেশি। কারণ হাজিরা। স্কুলপড়ুয়াদের কম হাজিরা দিয়েই কাজ করানো যায় আলু খেতে।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৮:৪৩
Share:

শিশু শ্রমিক। —ফাইল চিত্র।

সবুজ চা বাগিচার মাঝে আঁকাবাকা রাস্তা। সে রাস্তা দিয়ে পিঠে ঝোলায় চা পাতা তুলে নিয়ে ফিরছেন শ্রমিকেরা। বেশিরভাগই মহিলা। পাতা ওজন করার বড় দাঁড়িপাল্লা টাঙানো কোনও গাছের ডালে। সেখানে পাতা নামিয়ে রাখলেন শ্রমিকেরা। সেখানে দাঁড়িয়ে এক দু-জন নাবালিকা। পাতা মাটিতে নামানোর পরে নাবালিকার দল মাঠে বসে পাতা বাছাই, পৃথক পৃথক স্তূপে ওজন হিসেবে রাখার কাজ শুরু করল। জলপাইগুড়ি জেলার বহু ছোট চা বাগানে এমনটা পরিচিত দৃশ্য।

Advertisement

ধান কাটার পরে আলু বোনার কাজ চলছে। আলু বুনতে নাবালক-নাবালিকাদের চাহিদা বেশি। কারণ হাজিরা। স্কুলপড়ুয়াদের কম হাজিরা দিয়েই কাজ করানো যায় আলু খেতে। জলপাইগুড়ি জেলার গ্রামীণ এলাকার একাধিক স্কুলে এই সময়ে
পড়ুয়াদের উপস্থিতি কম থাকে। ময়নাগুড়ির একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, “প্রতি বছরই এই সময়ে পড়ুয়াদের অনুপস্থিতির হার বেশি থাকে। ছেলেরাই বেশি অনুপস্থিত থাকে। আমরা বাড়িতে যোগাযোগ করলে জানতে পারি, সব খেতে আলু বুনতে দৌড়েছে। আলু তোলার সময়েও একই ভাবে অনুপস্থিতির হার বেশি থাকে।”

চা এবং কৃষির উপরে ভিত্তি করে দাঁড়ানো অর্থনীতিতে জলপাইগুড়ি জেলায় চায়ের বাগানে এবং আলু খেতে শিশুদের মজুরির বিনিময়ে কাজ করতে দেখা অস্বাভাবিক নয়। রাজ্য বিধানসভায় শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক ‘রাজ্যে কোনও শিশু শ্রমিক নেই’ বলে ঘোষণার পরেও জেলার এ ছবি বদলে যাবে তার কোনও আশা নেই।

Advertisement

জলপাইগুড়িতে কলকাতা হাই কোর্টের সার্কিট বেঞ্চ বসে সাবেক জেলা পরিষদ ডাকবাংলোয়। সার্কিট বেঞ্চের ভবনের কিছুটা দূরে দুনম্বর গুমটি এলাকায় সার সার চাকা সারাইয়ের দোকান। সে দোকানগুলিতে কালিঝুলি মেখে শিশুদের কাজ করতে দেখা যায় প্রতিদিন। জেলার শ্রম দফতরের এক আধিকারিকের মন্তব্য, “জলপাইগুড়ি জেলায় বর্তমানে এক জনও শিশু শ্রমিক নেই। কারণ শিশু শ্রমিক নিয়ে কোনও সমীক্ষা গত তিন বছর ধরে হয়নি।” শিশু শ্রমিক নিয়ে কোনও মন্তব্য শ্রম দফতরের কর্তারা করতে চাননি। তবে এক আধিকারিকের মন্তব্য, “দফতরের শীর্ষ স্তর থেকে যা বলা হয়েছে, তার পরে আমাদের কিছু বলার নেই। তবে শিশু শ্রমিক বিরোধী সচেতনতা প্রসার এবং প্রচার করা হয় বিভিন্ন হাটে বাজারে।”

গত কয়েক বছরে জলপাইগুড়ি জেলায় কোনও শিশু শ্রমিককে উদ্ধারও করা হয়নি। জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিক প্রণব বিশ্বাস বলেন, “টাকার বিনিময়ে শিশুদের কাজ করানো আইন সঙ্গত নয়। অভিযোগ এলে, দল পাঠিয়ে খতিয়ে দেখা হবে।“

প্রশাসনের একাংশের দাবি, মূল সমস্যা দীর্ঘদিন সমীক্ষা না হওয়া। সে কারণে কোনও শিশুকে দোকানে বা গ্যারাজে কাজ করতে দেখলেও সরকারি ভাবে কড়া পদক্ষেপ করা যায় না বলে দাবি। ওই আধিকারিকের কথায়, “কিছু মাপকাঠিতে কে শিশু শ্রমিক, তা চিহ্নিত করা হয়। সে মাপকাঠি অনুযায়ী চিহ্নিত করতেই সমীক্ষা প্রয়োজন।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement