প্রতীকী ছবি।
এ বার সরকারি ও বেসরকারি জমি দখলে মদত দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের এক ‘প্রভাবশালী’ গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যের বিরুদ্ধে। শিলিগুড়ি শহর লাগোয়া শাখা সচিবালয় ‘উত্তরকন্যা’ এলাকার ঘটনা। প্রশাসন সূত্রের খবর, গত অগস্টে শিলিগুড়ির বাবুপাড়ার বাসিন্দা এক আইনজীবী লিখিত ভাবে ওই অভিযোগ করেছেন। জলপাইগুড়ির জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু থেকে শুরু করে রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী পর্যন্ত অভিযোগ গিয়েছে। একই ভাবে, ওই আইনজীবীর জমির পাশের এক চালকল ব্যবসায়ীও তাঁর প্রায় দেড় একর জমি অবৈধ ভাবে দখল করার অভিযোগ করেছেন। সরকারকে টাকা দিয়ে জমি নিলেও, প্রশাসন তাঁর হাতে জমি দিতে পারেনি বলে অভিযোগ। ওই তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য অভিযোগ না মানলেও, জমি দখলের বিষয় বরদাস্ত করা হবে না বলে মন্তব্য করেছেন জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব।
অভিযোগের আঙুল ফুলবাড়ি ১ নম্বর পঞ্চায়েত সদস্য ইয়ানুল হকের (মুন্সি) বিরুদ্ধে। ওই এলাকাটি শিল্প তালুকের জন্য তৈরি করা হলেও কিছু লোক সেখানে রমরমিয়ে জমির অবৈধ ব্যবসা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ। বহু কোটি টাকার জমি এ ভাবে দখল করা হয়েছে বলে অভিযোগ। অন্যতম অভিযোগকারী ওই আইনজীবী শিবাশিস মিত্রের দাবি ওই জায়গায় তাঁর প্রায় আট কাঠা জমি রয়েছে। তাঁর অভিযোগ, ‘‘আমাদের জমি অবৈধ ভাবে দখল করা হয়েছে। পঞ্চায়েত সদস্যের মদতেই সব করা হচ্ছে। প্রশাসনিক স্তরে সর্বত্র অভিযোগ জানিয়েছি।’’
শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের মধ্যে এলাকাটি হলেও, জলপাইগুড়ি জেলার অধীন। গত ৪ এপ্রিল জেলাশাসকের দফতরে জমি নিয়ে বৈঠকও হয়েছে। জলপাইগুড়ির জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেছেন, “জমি সংক্রান্ত সমস্যা থাকলে বিডিও, ভূমি দফতর বা আমার অফিসে এসে সরাসরি দেখা করুন। প্রশাসন থেকে পদক্ষেপ করা হবে।” তবে জেলার এক প্রশাসনিক কর্তা জানান, সব কিছু তদন্ত করে দেখার প্রক্রিয়া চলছে।
দু’বছর আগে, এলাকা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরে একাধিক অভিযোগ পৌঁছায়। পরে, উত্তরকন্যায় এলাকাতেই প্রশাসনিক বৈঠক করতে এসে মুখ্যমন্ত্রী কড়া ভাষায় পুলিশ-সহ সবাইকে সতর্ক করেন। উত্তরকন্যা, ফুলবাড়ি, গজলডোবা, ইস্টার্ন বাইপাস এলাকায় জমির কারবার, দখল নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পুলিশের ধরপাকড় শুরু হয়। হিম্মত সিংহ চৌহানের মতো তৃণমূল নেতাও সরকারি জমি দখলের মামলায় গ্রেফতার হন। এলাকার আবাসন দফতরের কিছু জমি দখলমুক্ত করা নিয়েও ব্যবস্থা হয়। তবেতার পরে আর কিছু হয়নি বলে অভিযোগ।
অভিযুক্ত নেতা ইয়ানুল অবশ্য বলছেন, ‘‘আমি জমির অবৈধ কারবারে জড়িত নই। যাঁদের এক সময় এ সব জমি ছিল তাঁরা দাবি করছেন, মামলা করেছেন। আমি এক বার মাত্র পুলিশ পাঠিয়েছিলাম এলাকায়। চক্রান্ত করে আমার ও দলের বদনাম করা হচ্ছে।’’ তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলার সভানেত্রী মহুয়া গোপ অবশ্য বলেন, ‘‘কোনও ভাবেই জমি দখলের বিষয় বরদাস্ত করা হবে না। আমরা অবশ্যই খোঁজ নেব। ফুলবাড়ি এলাকা নিয়ে আগেও অভিযোগ হয়েছিল। আবার বলছি, যারা এ সব করছেন, সরে আসুন। নইলে, দল কড়া ব্যবস্থা নিতে আর পিছপা হবে না।’’