ঝান্ডা অদলবদল করে চলল জোটের মিছিল

নারদ নিউজের স্টিং অপারেশনকে সামনে রেখে সিবিআই তদন্ত এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ চেয়ে শিলিগুড়িতে একযোগে পথে নামল বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্ব। শুক্রবার সন্ধ্যায় শিলিগুড়ি কেন্দ্রের সিপিএমের প্রার্থী অশোক ভট্টচার্য এবং কংগ্রেসের মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি প্রার্থী শঙ্কর মালাকার এক সঙ্গে হিলকার্ট রোডে মিছিল করেন। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন দুই দলের জেলা নেতৃত্বও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৬ ০২:৫৩
Share:

শিলিগুড়িতে একসঙ্গে পদযাত্রায় শঙ্কর মালাকার, জীবেশ সরকার, মহম্মদ সেলিম ও অশোক ভট্টাচার্য। শুক্রবার সন্ধ্যায় তোলা নিজস্ব চিত্র।

নারদ নিউজের স্টিং অপারেশনকে সামনে রেখে সিবিআই তদন্ত এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ চেয়ে শিলিগুড়িতে একযোগে পথে নামল বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্ব। শুক্রবার সন্ধ্যায় শিলিগুড়ি কেন্দ্রের সিপিএমের প্রার্থী অশোক ভট্টচার্য এবং কংগ্রেসের মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি প্রার্থী শঙ্কর মালাকার এক সঙ্গে হিলকার্ট রোডে মিছিল করেন। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন দুই দলের জেলা নেতৃত্বও। কয়েক হাজার কর্মী সমর্থকদের ওই মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য তথা সাংসদ মহম্মদ সেলিম। জেলায় জোট বার্তাকে আরও মজবুত করার বার্তা দিয়ে কংগ্রেস, সিপিএমের ওই মিছিলের জেরে সন্ধ্যায় হিলকার্ট রোডে যানজটও হয়।

Advertisement

কাপড় দিয়ে ঘেরা ঘণ্টা খানেকের কর্মিসভার পরে সন্ধ্যায় পুরসভার সামনে থেকেই মিছিল শুরু করেন বামেরা। তত ক্ষণে হাসমিচকে জেলা কংগ্রেস দফতরের নিয়ে মিছিল নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন দলের জেলা সভাপতি শঙ্করবাবু। বামেদের মিছিল থেকে যুব নেতারা এগিয়ে গিয়ে তাঁদের মিছিলে নিয়ে আসেন। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অশোকবাবু, জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকারের পাশে পা মেলান শঙ্করবাবু। দুই দলের পতাকা, নেতা কর্মীরা তৃণমূল সরকারকে হঠানোর ডাক দিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। গলায় গলায় মিলিয়ে, পতাকা অদলবদল করেও চলতে থাকে মিছিল। সেবক মোড়ের কাছে এসে মিছিল শেষ হয়।

এর আগে বাঘাযতীন পার্কে কর্মিসভা করে বামফ্রন্ট। সেখানে মহম্মদ সেলিম তৃণমূল নেত্রীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে জোটকে আরও শক্তিশালী করার ডাক দেন। সরব হন নারদ কাণ্ড নিয়ে তদন্তের দাবিতে।

Advertisement

সেলিম বলেন, ‘‘ওটা ১০০ শতাংশ চোরেদের দল। আর চোরের মা’র সব সময় বড় গলা। উনি হয়তো একমাত্র লোক বা দলের নেত্রী, যাঁর ছবির নীচে সততার প্রতীক বলে লেখা হয়। অনেক বিজ্ঞাপনের মতো। কই নেতাজি থেকে জ্যোতি বসু কারও তো এমন স্লোগান কোনওদিন লাগেনি। ওঁদের আর বেশি দিন এসব দিতে হবে না। সারদা থেকে নারদা-মানুষ সব টের পেয়ে গিয়েছে।’’

এর পরেই সেলিম জানান, তিনি সংসদে কথা বলায় মানহানির মামলা করবে বলছে। নোটিস পাঠিয়েছে। সেলিম বলেন, ‘‘আরে যাদের মানই নেই, তাদের আবার মানহানি। কেউ নেশার ঘোরে টাকা নিচ্ছেন। কেউ অফিসে দিতে বলছেন। কী অবস্থা! আমি আর কিছু বলছি না। গলি গলি থেকেই তো চোর চোর আওয়াজ আসছে। এই অবস্থায় শিলিগুড়ি একটি ‘ব্র্যান্ড’ হিসাবে উঠে এসেছে। কলকাতার থেকে গত এক বছরের শিলিগুড়ির নাম বেশি রাজ্যে আলোচিত হয়েছে। এই আওয়াজ বা ব্র্যান্ড ২৯৪টি আসনে ছড়িয়ে দিতে হবে।’’ তিনি জানান, তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রতারিতরা একজোট হয়েছে, গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে শক্তিশালী করে জনগণের জোটকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

মুখ্যমন্ত্রীর ভাই, ভাইপোর বিরুদ্ধে সম্পত্তি নিয়ে কটাক্ষ করার পর রায়গঞ্জের সাংসদ বলেন, ‘‘উনি না কি বলছেন ২৯৪ আসনে তিনিই প্রার্থী। তাঁকেই ভোট দিতে মানুষকে বলছেন। ঠিকই বলেছেন, আসলে তৃণমূলে তো উনিই ‘পোস্ট’ বাকি তো সব ‘ল্যাম্পপোস্ট’। ভয়ে এখন নিবার্চন কমিশন সম্পর্কে উল্টোপাল্টা বকছেন, চিৎকার করছেন।’’

অশোকবাবু বলেন, ‘‘জোটের পক্ষে প্রতিনিয়ত মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন বাড়ছে। আমরা একযোগে লড়াই করে তৃণমূলকে হারব। জেলায় একটি আসনও তৃণমূল পাবে না।’’ একই ভাবে কংগ্রেসের শঙ্করবাবু বলেন, ‘‘তৃণমূল সরকারকে সরাতেই হবে। এই চোর, স্বৈরাচারী শাসকের হাত থেকে বাংলাকে রক্ষা করতে আমরা বাংলাকে বাঁচাতে বামেদের পাশে এসেছি।’’

মাত্র ২৪ ঘন্টা আগেই শিলিগুড়ি পুরসভার ভোট অন অ্যাকাউন্ট পাশে কংগ্রেস-সিপিএমের জোটের ছবি ফুটে উঠেছিল। এদিন মিছিলের আগে সকালে সরাসরি কংগ্রেস অফিসে গিয়ে দুই দলের একাধিক প্রাক্তন এবং বর্তমান কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠক করে প্রচারের রূপরেখা তৈরির কাজে করেছেন সিপিএম প্রার্থী অশোকবাবু। সাত সকালে রবীন্দ্রনগরের স্থানীয় ২১ নম্বর কংগ্রেস কাউন্সিলর স্বপ্না দত্তের দফতরে ওই বৈঠক হয়। সেখানে একযোগে বাড়ি বাড়ি প্রচার, মিছিল, দেওয়াল লিখন, বুথ অফিস খোলা নিয়ে দুই দলের নেতারা প্রাথমিকভাবে আলোচনা সেরে ফেলেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement