অভিমানে আত্মঘাতী অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী! ঘটনাটি ঘটেছে জলপাইগুড়িতে। —নিজস্ব চিত্র।
কেউ বিশ্বাস করেনি তাকে। বান্ধবী নিজের স্বার্থে তাকে ফাঁসিয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষের কেউ তাকে বুঝলেন না। সবাই অপবাদ দিলেন। এক পাতায় জুড়ে খেদ লিখে বাড়িতেই গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করল ১৪ বছরের নাবালিকা। সুইসাইড নোটে জলপাইগুড়ির দেবনগর এলাকার শ্রেয়া ঘোষ লিখল, ‘‘আমার মৃত্যুর কারণ...’’
অভিযোগ, শুক্রবার রাত্রে নিজের ঘরেই আত্মহত্যা করে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী শ্রেয়া। তার পরিবারের অভিযোগ, পরীক্ষার সময় শ্রেয়ার আসনের পিছনে বসে এক পরীক্ষার্থী তার খাতা চায়। কিন্তু শ্রেয়া খাতা দেখাতে চায়নি। এর পরে পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে যায় শ্রেয়া। তখন ওই সহপাঠিনী শিক্ষিকার কাছে অভিযোগ করে যে, শ্রেয়া পরীক্ষায় নকল করেছে। শুধু অভিযোগের ভিত্তিতে শ্রেয়াকে মানসিক হেনস্থা করা হয়। এই অভিমানে কিশোরী আত্মঘাতী হয়েছে বলে দাবি পরিবারের। তারা এই মৃত্যুর জন্য দায়ী করেছে শ্রেয়ার এক সহপাঠিনী এবং স্কুল কর্তৃপক্ষকে। এ নিয়ে আইনের দ্বারস্থ হচ্ছেন বলে জানান মৃত শ্রেয়ার এক আত্মীয়।
মৃত শ্রেয়ার ঘর থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি চিঠি। তাতে লেখা, ‘‘স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং আমার প্রিয় বান্ধবী নিজের স্বার্থে আমার জীবনটা শেষ করে দিল... আমি কী ভাবে মুখ দেখাব স্কুলে! এই জীবন রাখার চেয়ে না রাখাই অনেক ভাল।’’ নাবালিকার মৃত্যুতে তীব্র শোরগোল শুরু হয়েছে এলাকায়। শ্রেয়ার এক আত্মীয়ের কথায়, ‘‘একটা অসত্য কথায় অপমানিত হয়ে ছোট্ট মেয়েটি আত্মঘাতী হল।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘এই প্রাণ যাওয়ার পিছনে তিন জন দায়ী। এক জন ছাত্রীর সহপাঠিনী। কারণ, সে পরীক্ষার সময় শ্রেয়ার কাছে উত্তরপত্র দেখতে চাইছিল। কিন্তু শ্রেয়া নিজের পরীক্ষার খাতা জমা দিয়ে বেরিয়ে যায়। এর পর ওই সহপাঠিনী গিয়ে শিক্ষিকার কাছে অভিযোগ করে যে শ্রেয়া পরীক্ষায় নকল করেছে। ওই কথার ভিত্তিতেই শিক্ষিকারা শ্রেয়াকে মানসিক নির্যাতন করেন। কিন্তু শ্রেয়ার কাছ থেকে কোনও সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়নি। তা সত্ত্বেও শিক্ষিকারা বার বার জোর দেন যে তোমাকে স্বীকার করতেই হবে যে, তুমি নকল করেছ।’’
শ্রেয়ার পরিবারের অভিযোগ, ‘‘ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা এবং যে শিক্ষিকা মানসিক নির্যাতন করেছেন এবং যে মেয়েটির মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে এত বড় একটা কাণ্ড ঘটে গেল— তাঁদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে।’’