গুরুঙ্গ-গড়ে একা চুংচুং

ম্যাল লাগোয়া জিটিএ-র দফতর ভানু ভবনে সকাল থেকেই সস্ত্রীক বসে ছিলেন তিনি। ভবনের ঠিক পিছনে পাহাড়ি পাকদণ্ডি দিয়ে নীচে নামলেই সেন্ট রবার্টস স্কুল। বুধবার সকাল নাগাদ সেখানকার গণনাকেন্দ্রেই প্রথম বার ঘাসফুল ফুটল শৈলশহরে।

Advertisement

কৌশিক চৌধুরী

দার্জিলিং শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৭ ০২:১০
Share:

ম্যাল লাগোয়া জিটিএ-র দফতর ভানু ভবনে সকাল থেকেই সস্ত্রীক বসে ছিলেন তিনি। ভবনের ঠিক পিছনে পাহাড়ি পাকদণ্ডি দিয়ে নীচে নামলেই সেন্ট রবার্টস স্কুল। বুধবার সকাল নাগাদ সেখানকার গণনাকেন্দ্রেই প্রথম বার ঘাসফুল ফুটল শৈলশহরে। শুনে ভুরু কুঁচকে গেল তাঁর। এলাকার নেতানেত্রীদের ডেকে পাঠিয়ে ভানু ভবনের এক কোণে বসে কথাও বললেন। তার পরে একের পর এক জয়ের খবরে ধীরে ধীরে ‘মুড’ বদলাতে লাগল। পরে বললেন, ‘‘ছেলেটা ভাল লড়াই করল। আমাদের কাছে সবই শিক্ষণীয়।’’

Advertisement

তিনি গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ।

শহুরে এলাকার একেবারে শেষ প্রান্তে ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী, তরুণ যুবক চুংচুং ভুটিয়া মোর্চার গ্যামসো শেরিংকে ৩৪ ভোটে হারিয়ে দেন। মাইকে রেজাল্ট ঘোষণা হতেই হাততালি। তবে জয়ের এই আনন্দ গোটা দলে সঞ্চারিত হতে পারল না বাকিদের ব্যর্থতায়।

Advertisement

পুর এলাকার তিব্বতি লামাদের এলাকা বলে পরিচিত ভোটেবস্তির বাসিন্দা চুংচুং, ২০১৪ সাল থেকে তৃণমূলে নাম লিখিয়েছিলেন। দলের দার্জিলিং টাউন কমিটির সাধারণ সম্পাদক তিনি। জিতেই বললেন, ‘‘এটা এলাকার নতুন প্রজন্মের জয়। সব সময় ওদের পাশে থাকি। ওরাও আমার পাশে থেকেছে।’’ তিনি জানান, মোর্চার সঙ্গে কড়া লড়াই হয়েছে। সংগঠনকে ঢেলে সাজতে হবে বলেও জানালেন।

তিব্বতিদের ধর্মীয় নথি বিনিময় ও সামান্য ব্যবসা করেন চুংচুং। স্ত্রী খান্দুলামা ভুটিয়া গ্যাংটক আদালতের চাকরি ছেড়ে এখন স্বামীর কাজের সঙ্গী। রাতে শ্মশান থেকে হাসপাতাল, সরকারি শংসাপত্র বার করা বা মাদকাসক্তদের মূলস্রোতে ফেরানো— সব কাজেই আছেন এই দম্পতি।

চুংচুং পারলেও বাকিরা কেন পারলেন না— সেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছেন তৃণমূলের অন্দরেই। রোশন গিরির বোন পরিসীমা লড়াই করেও জিততে পারেননি। জিটিএ মনোনীত সদস্য মিলন ঢুকপা বা মোর্চা সদরের প্রাক্তন সভানেত্রী সারদা সুব্বারই বা কেন এই হাল!

তৃণমূল নেতারাই জানাচ্ছেন, গত ছ’বছর তৃণমূল পাহাড়ে মনোনিবেশ করলেও অনেকেই মানুষের পাশে থেকে কাজ করেননি। কেবলমাত্র দলীয় রাজনীতি করেছেন। তাই ভোটের মাসখানেক আগে একাধিক বুথ অফিস খুলে পোস্টার ব্যানারে ছেয়ে ফেললেও মানুষ তাঁদের গ্রহণ করেননি। পরিচিত মুখদের অনেককেই আর পাহাড়বাসী পছন্দ করছেন না, সেটাও স্পষ্ট। সেখানে নতুন প্রজন্মের প্রার্থীরাই ভাল লড়াই করেছেন।

তাই গণনার শেষ পর্বে মোর্চার জয়ী প্রার্থী তথা প্রস্তাবিত পুরসভার চেয়ারম্যান ডিকে প্রধান বলেছেন, ‘‘আমরা সারা বছর মানুষের পাশে থাকি। হঠাৎ করে হাতজোড় করে নেতা-মন্ত্রীদের নিয়ে পদযাত্রা করলে তো হবে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement