মহকুমা শাসকের দফতরে সপরিবারে বিক্ষোভ ব্যবসায়ীদের। —নিজস্ব চিত্র।
বিধানসভা ভোট মিটেছে প্রায় চার বছর। তার পর থেকে অজস্রবার প্রশাসনের কাছে আবেদন-নিবেদন করেছেন। কিন্তু ভোটের কাজে ভাড়া দেওয়া জিনিসপত্রের টাকা আজও হাতে পাননি। আর কোনও রাস্তা না দেখে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পূর্ব বর্ধমানের তিন ব্যবসায়ী চলে যান কাটোয়া মহকুমাশাসকের কার্যালয়ের সামনে। সেখানে হাতে পোস্টার নিয়ে ধর্না দেন সকলে। দাবি, অবিলম্বে তিন জনের বকেয়া ৭০ লক্ষ টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করুক প্রশাসন। কিন্তু প্রশাসনের তরফে এখনও পর্যন্ত কোনও সাড়া মেলেনি।
কাটোয়া শহর এলাকার বাসিন্দা বৃন্দাবন ঘোষ,অলিভ দত্ত এবং অনুভব বন্দোপাধ্যায়ের ডেকরেটার্সের ব্যবসা। গত বিধানসভা নির্বাচনে ওই তিন ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় প্রশাসনের তরফে। তিন ব্যবসায়ী ভোটের সময় প্যান্ডেল করার বরাত পান। তা ছাড়া ভোটকর্মীদের জন্য খাবার এবং পানীয়ের সরবরাহ করেছিলেন। আলো, পাখা, লাউডস্পিকার ইত্যাদিও ভাড়ায় দিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে বিল হয়েছে প্রায় ৭০ লক্ষ টাকার। কিন্তু একটি টাকাও তাঁরা হাতে পাননি বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার মহকুমাশাসকের কার্যালয়ের সামনে ধর্নায় বসে তাঁরা চিৎকার করে বলেন, ‘‘হয় আমাদের পাওনা টাকা দিন। না হলে বিষ দিন। আমরা সপরিবারে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করব।’’ স্বাভাবিক ভাবেই এই ঘটনায় হুলস্থুল পড়ে যায় সরকারি অফিসে।
প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা যাচ্ছে, ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের সময় কাটোয়া কলেজ ও কাটোয়া কাশীরামদাস বিদ্যায়তনে ভোটকর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হয়েছিল। পরে ডিসিআরসি এবং গণনাকেন্দ্র হয়। কাটোয়া মহকুমার তিনটি বিধানসভা এলাকা— মঙ্গলকোট, কেতুগ্রাম এবং কাটোয়ার নির্বাচনী সংক্রান্ত প্রক্রিয়া কাটোয়া থেকেই সম্পন্ন হয়। ভোটকর্মীদের খাবার দাবারের ব্যবস্থা ঠিকাদারদের মাধ্যমেই করে থাকে প্রশাসন। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল।
দুই ব্যবসায়ী বৃন্দাবন এবং অনুভব জানান, তাঁরা প্যান্ডেল, আলো এবং মাইক ভাড়ায় দিয়েছিলেন। অলিভ জানান, দু’বেলার খাবার থেকে টিফিন এবং পানীয় জল তিনি সরবরাহ করেছিলেন। তাঁদের দাবি, ‘ওয়ার্ক অর্ডার’ পেয়ে কাজ করেছেন। কিন্তু কেউ কোনও টাকা পাননি। বৃন্দাবন বলেন, ‘‘ভোট মিটে যাওয়ার পর থেকে আমরা কত বার মহকুমাশাসকের কাছে এসেছি! অনেক বার চিঠিও দিয়েছি। কিন্তু টাকা পাইনি। এখন ধারদেনার মধ্যে পড়েছি।’’ অলিভের কথায়, ‘‘বাড়ি বয়ে পাওনাদারেরা তাগাদা দিয়ে যাচ্ছেন। রাস্তায় বেরোলে অপমানিত হতে হচ্ছে। কিন্তু নিজেদের প্রাপ্য টাকা পাচ্ছি না।’’ বৃন্দাবনবাবু জানিয়েছেন তাঁর পাওনা মোট ১৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। অলিভ এবং অনুভব পাবেন ৩৬ লক্ষ এবং ১৯ লক্ষ টাকা।
চিৎকার-চেঁচামেচির চোটে মহকুমাশাসকের অফিসে এবং কাটোয়া আদালতে আসা অনেক মানুষ ওই ‘ধর্নাস্থলে’ জড়ো হয়ে যান। তবে এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি কাটোয়ার মহকুমাশাসক অহিংসা জৈন। জেলাশাসকও এই নিয়ে কিছু বলতে অস্বীকার করেছেন।