প্রতীকী চিত্র
স্বামী দিল্লিতে পরিযায়ী শ্রমিক। শুক্রবার তাঁর অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দেওয়ার জন্য ব্যাঙ্কে গিয়েছিলেন স্ত্রী। সেই সময় বাড়ি থেকে তাঁদের সাড়ে তিন বছরের পুত্রসন্তান নিখোঁজ হয়ে যায় বলে অভিযোগ। শনিবার সকালে বাড়ির পাশের একটি পুকুর থেকে ওই শিশুর দেহ উদ্ধার করেন বাসিন্দারা। এই ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে হেমতাবাদ থানার দেহুচি এলাকায়। মৃত শিশুর নাম রোহিত রায়। এ দিন রায়গঞ্জ মেডিক্যালের মর্গে শিশুটির দেহ ময়নাতদন্ত করিয়েছে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের দাবি, পরিবারের লোকেদের অলক্ষ্যে খেলার সময় পুকুরের জলে তলিয়ে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। রায়গঞ্জ পুলিশ জেলার সুপার সুমিত কুমার বলেন, “তদন্ত ও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে আসলেই ওই শিশুটির মৃত্যুর কারণ জানা সম্ভব হবে।”
রোহিতের বাবা ষষ্ঠী ভিন্ রাজ্যে কাজ করেন। মা সাধনা গৃহবধূ। তাঁদের এক মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে রোহিত বড় ছিল। পুলিশ জানিয়েছে, লকডাউনের আগে ষষ্ঠী ও তাঁর দাদা চন্দন বেঙ্গালুরুতে একটি প্লাইউড কারখানায় কাজ করতেন। লকডাউনের জেরে পাঁচ মাস আগে তাঁরা বাড়ি ফেরেন। সেই থেকে তাঁদের রোজগার না থাকায় সংসারে আর্থিক অনটন লেগে ছিল। রোহিতের দাদু প্রদীপের দাবি, তিন সপ্তাহ আগে ষষ্ঠী ও চন্দন দিল্লির যমুনানগরে গিয়ে একটি প্লাইউড কারখানায় কাজে যোগ দেন। গত একসপ্তাহ ধরে তাঁরা সেখানে নিয়মিত কাজ পাচ্ছিলেন না। রোজগার না থাকায় ষষ্ঠীর হাতে টাকা ফুরিয়ে গিয়েছিল। শুক্রবার ষষ্ঠী সাধনাকে ফোন করে তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দিতে বলেন।
সেই মতো ওই দিন রোহিতকে বাড়িতে রেখে এক বছরের মেয়েকে নিয়ে হেমতাবাদ সদর এলাকার একটি ব্যাঙ্কে গিয়ে ষষ্ঠীর অ্যাকাউন্টে প্রায় তিন হাজার টাকা জমা দেন সাধনা। প্রদীপ বলেন, “সাধনা বাড়িতে ফিরে আসার পরে রোহিতকে না পেয়ে প্রতিবেশীদের বাড়িতে খোঁজাখুঁজি করেন। সন্ধে পেরিয়ে গেলেও রোহিতের খোঁজ না পেয়ে পরিবারের তরফে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। রাতভর পরিবারের লোকেরা নানা জায়গায় খুঁজেও রোহিতের হদিস পাননি। এর পরেই এ দিন সকালে বাড়ির পাশে পুকুরের জলে রোহিতের দেহ ভেসে ওঠে।”ছেলের শোকে কাতর সাধনা খালি বলে চলেছেন, “রোহিতকে নিয়ে ব্যাঙ্কে গেলে আমার এত বড় সর্বনাশ হত না।”