পাঁচ বছর আগে ধূপগুড়িতে রেল লাইনের পাশ থেকে দশম শ্রেণির ছাত্রীর ছিন্নভিন্ন বিবস্ত্র দেহ উদ্ধার হয়। প্রতীকী চিত্র
ধূপগুড়ির স্কুল ছাত্রীকে গণধর্ষণ এবং খুনের মামলায় চার্জ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হল জলপাইগুড়ি জেলা আদালতে। বৃহস্পতিবার এই মামলার চার্জ গঠন ছিল। এ দিন অবশ্য চার্জ গঠন হয়নি। সরকার পক্ষ তফসিলি জাতি এবং উপজাতিদের উপর অত্যাচারের আইনে বিচার চেয়েছিলেন। অভিযুক্তদের পক্ষের আইনজীবী আদালতে দাবি করেন, নিহত ছাত্রী এবং অভিযুক্তদের অনেকেই তফসিলি জাতি সম্প্রদায়ের। সে কারণে এই আইন বলবৎ হবে কি না, সে প্রশ্ন তোলা হয়। অভিযুক্তদের তরফে দাবি করা হয়, এই আইন বলবৎ হবে কি না, তা নিয়ে একটা শুনানি প্রয়োজন। ২৮ নভেম্বর সেই শুনানি হবে বলে এ দিন ধার্য হয়েছে।
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে সালিশি সভায় বাবাকে মারধরের প্রতিবাদ করায় ধূপগুড়ির দশম শ্রেণির ছাত্রীকে মাতব্বরেরা গণধর্ষণ করে খুন করে বলে অভিযোগ উঠেছিল। এ দিন জেলা আদালতে এসেছিলেন নির্যাতিতার বাবা। তিনি বলেন, “পাঁচ বছর হয়ে গেল, এখনও বিচার পেলাম না। নানা অজুহাতে মামলা পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।”
পাঁচ বছর আগে ধূপগুড়িতে রেল লাইনের পাশ থেকে দশম শ্রেণির ছাত্রীর ছিন্নভিন্ন বিবস্ত্র দেহ উদ্ধার হয়। পরিবারের দাবি, আগের রাতেই পাড়ায় সালিশি সভায় বাবাকে মারধরের প্রতিবাদ করেছিল ছাত্রীটি। প্রতিবাদ করায় ছাত্রীকে মারধর করে থুতু চাটার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। পরিবারের দাবি, কোনও মতে হাত ছাড়িয়ে পালিয়ে যায় ছাত্রীটি। অভিযোগ, সভা থেকেই কয়েক জন ছাত্রীর পিছু ধাওয়া করে। সারারাত নিখোঁজ থাকার পর পরদিন রেল লাইনে বিবস্ত্র দেহ উদ্ধার হয়। সে দিন রেলপুলিশের কাছে তৃণমূল নেতা সহ ১৪ জনের নামে গণধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ দায়ের করে ছাত্রীর বাবা।
শাসক দলের নেতাদের নাম জড়ানোয় সারা রাজ্যে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছিল। নাগরিক মঞ্চ তৈরি করে প্রতিবাদ শুরু হয় ধূপগুড়িতে। জেলা তৃণমূলের তরফ থেকে গোড়া থেকেই বারবার দাবি করা হয়েছে, ধূপগুড়ির ঘটনার সঙ্গে দলের কোনও যোগ নেই।
ছাত্রীর পরিবারকে ঘর ছাড়া হতে হয়েছিল বলে দাবি। কিছু দিন পরে মামলার মূল সাক্ষীর দেহ উদ্ধার হয়। সেই মামলায় পুলিশ নির্যাতিতা ছাত্রীর বাবা এবং মামাকে গ্রেফতার করে। নাগরিক মঞ্চ প্রশ্ন তোলে, নিজের মেয়ের খুনের মামলায় প্রধান সাক্ষীকে বাবা খুন করবেন কেন?
এ দিন বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়ি জেলা দায়রা আদালতের অতিরিক্ত জেলা বিচারক (প্রথম কোর্ট) অনির্বাণ চৌধুরীর এজলাসে চার্জ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সরকারপক্ষের আইনজীবী শুভ্রাংশু চাকি বলেন, ‘‘তফসিলিদের উপর অত্যাচারের আইনেই মামলার শুনানি হওয়া উচিত।’’ অভিযুক্তদের আইনজীবী সন্দীপ দত্ত বলেন, ‘‘কী কারণে তফসিলি আইন প্রয়োগ করা যাবে না, তা আদালতে জানাব।’’