পাহাড়, তরাই এবং ডুয়ার্সের এলাকার বিষয়ে একটা স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানের জন্য বৈঠক, দাবি রাজু বিস্তার। ছবি:পিটিআই
এক দিকে রাজ্যের সঙ্গে আগাম আলোচনা না করেই দিল্লি বৈঠক ডাকল ‘গোর্খাল্যান্ড সংক্রান্ত বিষয়’ নিয়ে আলোচনার জন্য। অন্য দিকে, দার্জিলিঙে সাংসদ এই নিয়ে মতামত জানাতে গিয়ে গোর্খাল্যান্ড শব্দটি মুখে না আনলেও ‘পাহাড়, তরাই ও ডুয়ার্স বিষয়ে স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানের’ কথা বলে বিতর্ক আরও কিছুটা উস্কে দিলেন। প্রশ্ন উঠে গেল, পাহাড় যখন শান্ত, তখন রাজ্যকে এড়িয়ে এই বৈঠক ডাকায় কি নতুন করে অশান্তির ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে না? আর, সাংসদ কি পাহাড়ের সঙ্গে তরাই, ডুয়ার্সে জড়িয়ে তাকে নতুন মাত্রা দিলেন না?
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে পাঠানো এই চিঠিতে ৭ অক্টোবর বেলা ১১টায় দিল্লিতে বৈঠকের জন্য সংশ্লিষ্ট লোকজনদের ডাকা হয়েছে। চিঠি পাঠানো হয়েছে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব, জিটিএ-র প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি এবং দার্জিলিঙের জেলাশাসকের নামে। চিঠিতে যোগ করা হয়েছে সিংমারিতে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সদর দফতরকেও।
রাজ্য সরকার এই চিঠি এবং তা পাঠানোর পদ্ধতির কঠোর সমালোচনা করে জানিয়েছে, এটা রাজ্যের এক্তিয়ারে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ বলেই মনে করা হচ্ছে। তাদের কথায়, রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা না করে এই বৈঠক ডাকার অধিকার নেই দিল্লির, তাই বৈঠকে যোগ দেবে না রাজ্য। নবান্নকে এড়িয়ে সরাসরি দার্জিলিঙের জেলাশাসককে চিঠি পাঠানোর অর্থ যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোয় আঘাত— এই দাবিও করেছে প্রশাসন।
রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব স্পষ্টই এই চিঠিকে সমালোচনা করে বলেছেন, ‘‘ভোট এলেই বিজেপি পাহাড়ে ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমে পড়ে। পাহাড়কে অশান্ত করার সুপরিকল্পিত চক্রান্ত শুরু করেছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, বাংলা ভাগের প্রশ্নই নেই। প্রয়োজনে আমরা প্রতিরোধ করব, রক্ত দিয়ে লড়ব।’’ দার্জিলিঙের জেলাশাসক বা জিটিএ সচিব এই নিয়ে কোনও কথা বলতে চাননি।
বিজেপি নেতাদের দাবি, বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করছে তৃণমূলই। রাজু বিস্তা বলেন, ‘‘আমাদের সংকল্পপত্রে যা বলা হয়েছিল দল সেগুলি নিয়ে কাজ করছে। পাহাড়, তরাই এবং ডুয়ার্সের এলাকার বিষয়ে একটা স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানের জন্য বৈঠক ডাকা হয়েছে।’’ তিনি জানান, রাজনীতি না করে এই অঞ্চলের উন্নয়ন, আর্থিক বিকাশ এবং স্থায়ী শান্তির জন্য এই বৈঠকে যোগ দেওয়া উচিত সবার।
তবে বিমল গুরুং গোষ্ঠী এই বৈঠক নিয়ে উল্লসিত। বিমলপন্থী মোর্চার কার্যকরী সভাপতি লোপসাং লামা বলেন, ‘‘আমাদের লড়াই বিফল হয়নি, তা বোঝা যাচ্ছে। কেন্দ্রের ডাকা বৈঠক থেকে পাহাড়ের সোনালি দিনের শুরুটা হতে চলেছে।’’ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক মোর্চার সদর দফতরে চিঠি দিয়েছে। এতে বিমল বা বিনয় কাকে ডাকা হল, তা নিয়ে ধোঁয়শা থেকেই গেল। রবিবার বিনয় তামাংয়ের বাবা মারা গিয়েছেন। বিনয়পন্থী মোর্চা গোষ্ঠীর সচিব অনীত থাপাও এখনই মন্তব্যে নারাজ।