তদন্তে রাজি সিবিআই। — ফাইল চিত্র।
দম্পতিকে আত্মহত্যায় ‘প্ররোচনা’ দেওয়ার অভিযোগের তদন্তের দায়িত্বভার নিতে রাজি সিবিআই। এই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত জলপাইগুড়ি জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি তথা পুরসভার উপ পুরপ্রধান সৈকত চট্টোপাধ্যায়। সৈকতকে ‘প্রভাবশালী’ দাবি করেই এই মামলায় পুলিশের বদলে সিবিআই তদন্ত চেয়েছেন মৃত দম্পতির দিদি তথা ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির বিজেপি বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায়।
গত বুধবার কলকাতা হাই কোর্টে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার একক বেঞ্চে এই মামলার শুনানি চলাকালীন এমনই জানিয়েছেন সিবিআইয়ের আইনজীবী। বুধবারের শুনানির পরে, বিচারপতি যে অন্তর্বর্তিকালীন লিখিত নির্দেশ দিয়েছেন, তাতে সিবিআইয়ের সম্মতির কথাও উল্লেখ করেছেন। আজ, শুক্রবার ফের মামলার শুনানি হওয়ার কথা।
গত ১ এপ্রিল জলপাইগুড়ির পান্ডাপাড়ার বাসিন্দা জলপাইগুড়ি পুরসভার প্রাক্তন উপ পুরপ্রধান অপর্ণা ভট্টাচার্য এবং তাঁর স্বামী জেলা শিশুকল্যাণ সমিতির প্রাক্তন সদস্য সুবোধ ভট্টাচার্য আত্মঘাতী হন বলে পরিবারের দাবি। মৃত দম্পতির ঘর থেকে একটি ‘সুইসাইড নোট’ও উদ্ধার হয় বলে দাবি পুলিশের। সেই ‘নোট’-এ সৈকত চট্টোপাধ্যায় ও তৃণমূলের আর এক পুরপ্রতিনিধি সন্দীপ ঘোষ-সহ মোট চার জনের নামে ‘প্ররোচনা’ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ‘সুইসাইড নোটে’ আরও দাবি করা হয়, অভিযুক্তেরা সকলে শিশুপাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত।
ঘটনাচক্রে, সুবোধ ভট্টাচার্য জলপাইগুড়ির একটি হোমে শিশুপাচার চক্র নিয়ে অভিযোগ তুলেছিলেন। সে কারণেই দম্পতিকে হুমকি দেওয়া থেকে টাকা আদায়, সাদা কাগজে সই করানো হয়। এমনকি, বাড়ির দলিল আটকে রাখা হয় বলেও অভিযোগ। ওই ‘সুইসাইড নোট’-এর ভিত্তিতে জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন বিধায়ক শিখা। তার কয়েক দিন পরে দম্পতির মেয়ে তানিয়া ভট্টাচার্য জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেনালিশ জানান, সৈকত তাঁকে হুমকি দিচ্ছেন।
এর পরেই মামলার সিবিআই তদন্ত চেয়ে হাই কোর্টে মামলা করেন শিখা চট্টোপাধ্যায়। বুধবার শুনানির পরে, বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানার আইসির থেকে তদন্তের বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়েছেন। রাজ্যের তরফ থেকে হাই কোর্টে জানানো হয়েছে, ইতিমধ্যে ছ’জনের গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে, ‘সুইসাইড নোট’-এর হাতের লেখাও মিলিয়ে দেখার কাজ চলছে। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “বিচারাধীন বিষয়। তদন্ত নিয়ে আদালতে রিপোর্ট জানানো হচ্ছে।” অন্য দিকে, এই মামলার প্রধান অভিযুক্ত সৈকত বলেন, “আমি এই মামলার কিছু জানি না। আমি নির্দোষ। যে কোনও সংস্থা তদন্ত করে দেখতে পারে। সবটাই বিজেপির ষড়যন্ত্র।”
অন্য দিকে, শিখার অন্যতম আইনি পরামর্শদাতা সৌজিত সিংহ বলেন, “পুলিশ এত দিন কোনও তদন্তই করেনি। বুক ফুলিয়ে মূল অভিযুক্ত ঘুরে বেড়িয়েছে। এ বার হাই কোর্টে সুবিচার চাইব।”